জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: তীব্র শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আইন ও বিচার বিভাগ। প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থীর জন্য এই বিভাগে রয়েছে একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র অনুষদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় আইন ও বিচার বিভাগ। প্রতিষ্ঠাকালে দ্রুত ভবন নির্মাণ করে বিভাগ স্থানান্তর করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় তলায় একটিমাত্র শ্রেণিকক্ষ নিয়ে যাত্রা করে আইন ও বিচার অনুষদ। কিন্তু দীর্ঘ পাঁচ বছর হয়ে গেলেও এই বিভাগের জন্য নতুন কোনো ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। এমনকি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ভবন বরাদ্দও দেওয়া হয়নি।
বিভাগের দাবি, এ সমস্যার সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কমপক্ষে ৫-৬টি লিখিত চিঠি প্রেরণ, একাডেমিক কাউন্সিল ও উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তেমন কোনো চূড়ান্ত সমাধান দিতে পারেনি। প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, নতুন ভবন তৈরি করা হলে আইন ও বিচার বিভাগকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দেওয়া হবে।
বিভাগটি ঘুরে দেখা যায়, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় তলায় আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করছেন। একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করলে বাইরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে আরেকটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। এভাবে বর্তমানে চারটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে হচ্ছে।
একসঙ্গে চারটি ব্যাচের ক্লাস করানো সম্ভব নয় বলে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের আওতাধীন লোক-প্রশাসন বিভাগ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে শ্রেণিকক্ষ ধার নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে তাদের। যে কারণে অনেক সময় ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্লাস করা নিয়ে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টির হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
এ অবস্থায় শিক্ষাকার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে নতুন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের আগামী ১২ মার্চ থেকে ক্লাস শুরু হবে। এ কারণে এ সংকট আরও বাড়বে বলে চিন্তিত বিভাগীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
তবে সাময়িকভাবে সমস্যা সমাধানে নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের দ্বিতীয় তলায় ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণাগারের অফিস কক্ষ হিসেবে যে রুমটি ব্যবহার করা হতো, সেটি খালি করে একটি শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হচ্ছে। যদিও এখন পর্যন্ত সেখান থেকে বিজ্ঞান কারখানার যন্ত্রাংশ স্থানান্তর করা হয়নি।
এ নিয়ে আলাপ করলে আইন ও বিচার বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. আফজাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, একটি বিভাগের জন্য একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ ভাবতেই অবাক লাগে। যেখানে একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করলে আরেক ব্যাচের শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এটা খুবই বিব্রতকর। তাছাড়া আমাদের সেমিনার লাইব্রেরিতে লাইব্রেরিয়ান না থাকায় সেমিনার লাইব্রেরি অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকে। যার কারণে বিভাগে গিয়ে পড়াশোনাও করতে পারি না।
বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের বিভাগে শ্রেণিকক্ষের সমস্যা এতো তীব্র আকার ধারণ করেছে যে, আমরা শ্রেণিকক্ষের কারণে সঠিক সময়ে ক্লাস করতে পারি না। এমন অনেক দিন আছে যে, ক্লাস না করেই চলে আসতে হয়েছে।
এ বিষয়ে বিভাগের প্রভাষক শায়লা আলম আশা বলেন, বর্তমানে চার-পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়ন করছে। কিন্তু সেই তুলনায় শ্রেণিকক্ষ নেই বললেই চলে। এ কারণে রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। অনেক সময় দেখা যায়, সকাল ৯টার সময় একটি ক্লাস নিলে আবার সারাদিন বসে থেকে বিকেল ৩টার সময় আরেকটি ক্লাস নিতে হচ্ছে। এ কারণে শিক্ষার্থীদের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যদি বেশি শ্রেণিকক্ষ থাকতো তাহলে আমরা শিক্ষার্থীদের আরও ভাল করে পাঠদান করাতে পারতাম।
এ বিষয়ে বিভাগীয় সভাপতি মো. রবিউল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এ সমস্যার আশু সমাধান না করে ভবিষ্যৎধর্মী আশ্বাস দিয়েছে। ভবণ নির্মাণ করে কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধান করা হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে প্রশাসন যদি চায় পুরনো রেজিস্ট্রার ভবনে আমাদের স্থানান্তর করতে পারে। এতে খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে বলে আমি মনে করি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ও উপ-উপাচার্য মো. আবুল হোসেনকে একাধিক বার ফোনকল করেও পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এইচএ/