বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে : ‘প্রকৃতি কন্যা’ খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কতশত মধুর স্মৃতি।
বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা, চটপটি, ফুচকা, ঝালমুড়ি খাওয়া, খুনসুটি কিংবা ব্রহ্মপুত্রের বুকে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো-এসব শুধুই স্মৃতি।
ব্যস্ততার শেকলে বাধা জীবনে স্মৃতিময় মধুর এ অতীত রোমন্থন করারও খানিক অবসর জুটে না। তবে কালো গাউন আর মাথায় ক্যাপ পড়ে গ্র্যাজুয়েট হওয়া শিক্ষার্থীরাও যেন আরেকবার ফিরে গেলেন পুরনো দিনের আড্ডায়-আনন্দে।
উচ্ছ্বাস-আনন্দে তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরছেন। হৈ-হুল্লোড়ে ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি হচ্ছেন। তাদের চোখে-মুখে অবারিত আনন্দ। তাদের জন্য দিনটি শুধুই নির্ভার আনন্দ ধারায় ভাসার।
ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের চিত্রপট ছিল এমনই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরের এ উচ্ছ্বাসের ঢেউ আছড়ে পড়েছে বোটানিক্যাল গার্ডেন কিংবা খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়েও।
দেশের কৃষি শিক্ষার মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ৫৪ বছরের গৌরবময় পথচলার স্বাক্ষী এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ছিল সপ্তম সমাবর্তন। ২০১১ সালের ৮ মার্চ ৬ষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি পর্যায়ে ডিগ্রি প্রাপ্তদের মোট সংখ্যা ৪ হাজার ৯’শ ৯ জন। তাদের মধ্যে ১৭ জন পিএইচ.ডি, ২’শ ৫৫জন স্নাতকোত্তর এবং ৬’শ ১৪ জন স্নাতকসহ সর্বমোট ৮৮৬ জন ডিগ্রি প্রাপ্ত কৃষিবিদ সমাবর্তনে অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ সমাবর্তনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ভবন, সড়ক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। ছিল চোখ ধাধানো আলোকসজ্জাও।
সমাবর্তনের দিন কালো গাউন আর মাথায় ক্যাপ পড়ে গোটা আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে গোটা ক্যাম্পাস দাপিয়ে বেড়ান সনদপ্রাপ্ত গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীরা। এ যেন এক অন্য রকম অনুভূতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় ৭১’র পাদদেশে আলাপ হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী ইমরান হোসেনের সঙ্গে।
বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় শিক্ষাজীবনের স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন। গাল ভরা হাসি নিয়ে তিনি বলেন, ‘গোটা ক্যাম্পাস আজ উৎসবস্থল। সবার মাঝে প্রাণের উচ্ছ্বাস।
খানিকা এগুতেই আলাপ হলো রাজিব হোসেন ও দীপক কুমার নামের স্নাতকোত্তর দু’শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তাদের ভাষ্যে, ‘এমন সমাবর্তন সবার ভাগ্যে জুটে না। ’ ক্যাম্পাস জীবনের শ্রেষ্ঠ এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে নিজেদের ছবির ফ্রেমে বন্দি করার প্রতিযোগিতায় নামেন।
জাঁকালো সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে এসেছিলেন ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী। সমাবর্তন শুধুমাত্র সনদ বিতরণী অনুষ্ঠান নয় বলে মনে করেন তিনি।
তার ভাষ্যে, সমাবর্তন একদিকে যেমন প্রাতিষ্ঠানিক সাধনা ও সিদ্ধির সঙ্গে জাতির আশা-আকাঙ্খার মেলবন্ধন ঘটিয়ে থাকে।
তেমনি এর নিত্য নতুন সম্ভাবনাকে জাগ্রত ও চঞ্চল করে। বস্তুত সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জ্ঞান ও দতায় সমৃদ্ধ নবীন প্রজন্মের এই প্রত্যয়মন্ডিত যাত্রার উদ্দেশ্যে জাতির শুভকামনা উচ্চারিত হয়ে থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান সমাবর্তন অনুষ্ঠানে গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থীদের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না হবার আহবান জানান। তিনি বলেন, দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করে যাবেন। তখনই স্বার্থক হবে আপনাদের অর্জিত শিক্ষা।
গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মো. আলী আকবর। এ উপাচার্যের কথায়-নিজেদের মেধা, দতা ও প্রযুক্তি বিজ্ঞান প্রয়োগ করে দেমের কৃষি উৎপাদনে নতুন গতিশীলতা সঞ্চার করবে।
গ্র্যাজুয়েটদের নিয়ে সমগ্র জাতি স্বপ্ন দেখে উল্লেখ করে নিজের ভাষণে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, গোটা দেশ আজ তোমাদের মুখের দিকে চেয়ে আছে।
সমগ্র জাতি তোমাদের ঘিরে স্বপ্ন দেখে। দেশের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তোমরা একযোগে কাজ করবে। আমাদের শুভেচ্ছা হোক তোমাদের সামনের চলার প্রেরণা।
নিজের লিখিত বক্তব্যের শেষপ্রান্তে এসে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন রাষ্ট্রপতি। বলেন, ‘আমার বাড়ি কিশোরগঞ্জের হাওরে। যেখানে কৃষি ছাড়া কিছু নাই। আমার বাবা একজন কৃষক। আমার ছেলেও এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবীদ হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
বিএস