ঢাকা: গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গত ছয় বছরে তথ্য প্রযুক্তিগত সেবা বেড়েছে। কিন্তু শিক্ষক সংখ্যা এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তেমন বাড়েনি।
শিক্ষক ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যায় এবং টয়লেট সুবিধায় খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের অনুপাত কমে এসেছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সর্বশেষ জরিপ পর্যালোচনা করে এমন তথ্যই পাওয়া যায়।
গুণগত শিক্ষার জন্য ব্যানবেইস নির্ধারিত ১১টি সূচক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের এই ছয় বছরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির সুবিধা। আর চার বছরে স্কুলগুলোতে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও তিন বছরে বেড়েছে সোলার সিস্টেম ব্যবস্থাপনা।
২০১০ সালে মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ছিল ১: ৩৪ জন, ২০১১ সালে ১: ৩০ জন, ২০১২ সালে ১: ৩৬ জন, ২০১৩ সালে ১: ৩৭ জন, ২০১৪ সালে ১: ৩৯ জন এবং ২০১৫ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১: ৪১ জন। অর্থাৎ শিক্ষার্থীর তুলনায় কমেছে শিক্ষক সংখ্যা।
ছয় বছরে ছাত্রের তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা না বাড়ার পাশাপাশি প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যাও তেমন বাড়েনি বলে জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০১০ সালে প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ৮৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ২০১১ সালে ৭৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ২০১২ সালে ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ, ২০১৩ সালে ৭৩ দশমিক ৮ শতাংশ, ২০১৪ সালে ৬২ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে তা হয়েছে ৬৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। অর্থাৎ প্রশিক্ষিত শিক্ষকের সংখ্যায় বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি। তবে স্কুলগুলোতে বেড়েছে টয়লেটের সংখ্যা। ২০১০ সালে যা ছিল ৯৪ দশমিক ৯২ শতাংশ, ২০১৫ সালে হয়েছে ৯৫ দশমিক ১৬ শতাংশ।
২০১০ সালে কম্পিউটার সুবিধা ছিল ৫৯ দশমিক ২১ শতাংশ, ২০১৫ সালে হয়েছে ৮২ দশমিক ২১ শতাংশ। ২০১০ সালে ইন্টারনেট সংযোগ ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ থাকলেও ২০১৫ সালে বেড়ে হয়েছে ৭২ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
বিদ্যুৎ সুবিধা ২০১০ সালে ছিল ৭১ দশমিক ৭১ শতাংশ মাধ্যমিক স্কুলে, ২০১৫ সালে তা হয়েছে ৮৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। ২০১০ সালে সুপেয় পানির ব্যবস্থা ৮৫ শতাংশ থাকলেও ২০১৫ সালে হয়েছে ৯৬ দশমিক ৫১ শতাংশ।
গত পাঁচ বছরে সরকার তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করছে। ব্যানবেইসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ২০১২ সালে ছিল ১০ দশমিক ১০ শতাংশ, সর্বশেষ তথ্যে এখন তা বেড়ে হয়েছে ৭১ দশমিক ৯০ শতাংশ।
এছাড়া, স্কুলগুলোতে সোলার সিস্টেম ২০১৩ সালে ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ থেকে ২০১৫ সালে বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হারে ইতিবাচক পরিবর্ত এসেছে। গত আট বছরে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমেছে ২১ দশমিক ০৯ শতাংশ। এর মধ্যে ছাত্র ২২ দশমিক ৮৯ এবং ছাত্রীর হার ১৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
২০০৮ সালে ঝরে পড়ার হার ছিল ৬১ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৪০ দশমিক ২৯ শতাংশ। বর্তমানে মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার ৪০ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর মধ্যে ছেলে ৩৩ দশমিক ৭২ এবং ছাত্রী ৪৫ দশমিক ৯২ শতাংশ।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পলাশীতে ব্যানবেইস ভবনে ‘বাংলাদেশ শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০১৫’র ওপর এক কর্মশালায় বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সংস্থার প্রধান পরিসংখ্যানবিদ শামসুল আলম।
২০১৩ সাল থেকে অনলাইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়ে সংগৃহীত তথ্যের যথাযথ নিশ্চিত করতে ২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ফের তথ্য সংগ্রহ করা হয় বলে জানান ব্যানবেইসের প্রধান পরিসংখ্যানবিদ।
শিক্ষার্থীর ঝরে পড়াকে ‘অপচয়’ উল্লেখ করলেও তিনি জানান, কয়েক বছরে ভর্তি হওয়ার হার ভালো।
কর্মশালায় যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য সঠিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী আরও নিখুঁতভাবে পরিসংখ্যান উপস্থাপনের নির্দেশ দেন।
শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন, ব্যানবেইসের পরিচালক ফসিহউল্লাহসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ব্যানবেইসের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
এমআইএইচ/টিআই