শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার): শ্রীমঙ্গল উপজেলার আলিশারকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরির হাতুড়ির আঘাতে পাঁচ শিক্ষার্থী রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্কুলটির শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এরপর থেকে ভয়ে ক্লাসে আসছে না শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৯ মার্চ) দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির কক্ষে মোট চার জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যান্য ক্লাসরুমেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। যারা এসেছে তাদের মনেও ভয় কাজ করছে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলের আসার জন্য অনুরোধ করছেন।
এই বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৮১ জন। স্কুল কর্তৃপক্ষ আজ (বুধবার) ৫ম শ্রেণীতে ৩৩ শিক্ষার্থী উপস্থিতির কথা বললেও গিয়ে পাওয়া গেলো মাত্র ৪ জনকে। ভয়েই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে বলে জানান উপস্থিত শিক্ষকরা।
গত ৫ মার্চ সকালে অ্যাসম্বলি শেষ হওয়ার পর স্কুলের দফতরি কাম প্রহরী সুমন মিয়া স্কুল-ঘণ্টার লোহার হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লিজা আক্তার, শিমলা আক্তার, রাশেদা আক্তার, শফিকুল ইসলাম ও ৪র্থ শ্রেণীর ফাস্টবয় নুরুজ্জামান মৌলাদকে গুরুতর আহত করে। সুমন মিয়া ওই স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক লেচু মিয়ার ভাইপো।
এদিকে এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৮ মার্চ) উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্কুলের এসএমসি সভাপতিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে সুমন মিয়ার নিয়োগের চুক্তিনামা বাতিল ও তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার নির্দেশ দেন।
কিন্তু আলিশারকুল স্কুল পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্টরা প্রভাবশালী হওয়ায় এখন পর্যন্ত স্কুল কর্তৃপক্ষ সুমন মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেনি।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা আছিয়া বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সুমন মিয়াকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনার দিন বিকেলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার জ্যোতিশ রঞ্জন দাসের নেতৃত্বে স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে করা হয়। ৬ মার্চ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মোশারফ হোসেন স্কুল পরিদর্শন করেন ও আহত শিক্ষার্থীদের বাসায় যান।
ওই ঘটনার শিকার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র শফিকুল ইসলাম জানান, অ্যাসম্বলি শেষে ক্লাসে যাত্তয়ার সময় আচমকাই তাদের হাতুড়ি দিয়ে পেটাতে শুরু করেন সুমন মিয়া।
স্কুল পরিচালনা কমিটির নারী সদস্য মলকুত বেগম বলেন, সুমন মিয়া আগেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। তার এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে আমি একা হয়ে যাই। কেউ আমার পক্ষে এসে দাঁড়ায় না। আমি নিজেও এই ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই।
মলকুত বেগম ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক লেচু মিয়ার স্ত্রী।
ওই ঘটনার শিকার লিজা আক্তারের অভিভাবক আবুল কাসেম জানান, তারা ভয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না। তিনি এ ঘটনাকারীর শাস্তি দাবি করে।
তবে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক লেচু বাংলানিউজকে বলেন, দফতরি সুমন মিয়া খুবই অসুস্থ। সে এখন হাসপাতালে। ঘটনাটি আমরা সামাজিকভাবে সমাধান করে ফেলেছি।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ওই দফতরির চুক্তিনামা বাতিল করা হয়েছে। আর মামলার বিষয়টি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি দেখছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় উপপরিচালক তাহমিনা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, এই ঘটনায় তো অপরাধীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত। বিষয়টির ব্যাপারে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
বিবিবি/আরএম