ঢাকা: ‘কারিগরি শিক্ষা’ যুবসমাজের চাকরি ও আত্মকর্মসংস্থানের অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করে হাজার-হাজার তরুণ-তরুণী বেকার থাকলেও কারিগরি শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে কেউ বেকার নেই। পাস করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি পায়।
তিনি বলেন, দক্ষতা অর্জন করতে পারলে তাদের চাকরি খুঁজতে হবে না, চাকরিই তাদের খুঁজে বের করবে।
শিক্ষামন্ত্রী শুক্রবার (০১ এপ্রিল) স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্টের (স্টেপ) সহযোগিতায় ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে দিনব্যাপী জব ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বর্তমান সরকার কারিগরি শিক্ষায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ২০০৮ সালে যেখানে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল ১.২ শতাংশ, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩.১১ শতাংশ। ২০২০ সালের মধ্যে এ হার ২০ শতাংশ উন্নীত করা হবে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফলে সরকারি-বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা-প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে ২০০৮ সালের ৭ লাখ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৫ লাখের অধিক হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষার পরিধির বিস্তৃতি প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ২৩টি আন্তর্জাতিক মানের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে নতুন কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হচ্ছে। বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন আরও এক লাখ শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারিগরি খাতে পূর্বে কোনো প্রকল্প ছিল না। এ সরকারের সময়েই কারিগরি খাতে ৫টি বড় বড় প্রকল্প উন্নয়ন গ্রহণ করা হয়েছে।
দক্ষ ও আধুনিক কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য উপযুক্ত শিক্ষক গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, সিঙ্গাপুরের বিশ্বখ্যাত নানইয়াং পলিটেকনিক থেকে ৪২০ জন শিক্ষককে উচ্চমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে আনা হয়েছে। আরও ১ হাজার ১৫০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এ মাস থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু হবে।
নাহিদ বলেন, সরকার কারিগরি শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দেশের ৪টি বিভাগীয় শহরে ৪টি নারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে, বাকি ৩টিতে স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। পলিটেকনিকে ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের জন্য ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত আছে। একশত ভাগ নারী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হয়।
তিনি বলেন, সরকার কারিগরি খাতে নতুন বিপ্লব এনে দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অশোক কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন, উপসচিব সুবোধ চন্দ্র ঢালী, স্কিলস অ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট ডিরেক্টর মো. ইমরান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেসন্স অফিসার মোখলেছুর রহমান, ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মোজাহার হোসেন বক্তৃতা করেন।
দিনব্যাপী জব ফেয়ারে দেশের খ্যাতনামা শিল্পকারখানার পক্ষ থেকে স্টল স্থাপন করা হয়েছে। জব ফেয়ার উপলক্ষে ‘কারিগরি শিক্ষায় নারীর ভূমিকা’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করা হয়।
জব ফেয়ারে স্যামসাং বাংলাদেশ, জবস বিডি, প্রাণ গ্রুপ, আরএফএল গ্রুপ, ওয়ালটন, স্পেকট্রাম, রাশেদুল হাসান অ্যাসোসিয়েটস, টেকনোক্রেসি, এশিয়ান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, বেঙ্গল সায়েন্টিফিক লিমিটেড, রেইনবো অটোমেশন, সতত আর্কিটেক্সার ফর গ্রিন লিভিং, ত্রিমাত্রা, পান্থনীড়, ইউনাইটেড কনসালট্যন্টসহ মোট ৩০টি প্রতিষ্ঠান অংশ গ্রহণ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৬
এমআইএইচ/আইএ