জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: অনিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষায় তীব্র সেশনজটে পড়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
শিক্ষকদের এ দাবি বাস্তবায়িত হলে আরো তীব্র সেশনজটে পড়বেন বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষকদের এমন দাবি অযৌক্তিক বলেও মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একাংশের শিক্ষকরা বিষয়টিকে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সপ্তাহে দুই দিন বন্ধ রাখার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সুপারিশ করেছে। শনিবার (০৯ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনের সেমিনার কক্ষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় তারা এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
শিক্ষকদের এমন দাবির পরিপেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এমনকি অফিসার সমিতি, কর্মচারী সমিতি, কর্মচারী ইউনিয়ন সবাই এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘এ দাবির প্রধান কারণ হচ্ছে, যাতে আমাদের শিক্ষকরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো করে ক্লাস নিতে পারেন’। আরেক শিক্ষার্থী লেখেন, ‘তিনদিন হলে আরও ভালো হয়’। তার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য আরেক শিক্ষার্থী কমেন্টস করেন, ‘শিক্ষকদের শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ৬দিন ছুটি থাকা দরকার’।
এর সঙ্গে আরেক শিক্ষার্থী যোগ করে বলেন, ‘এমন শিক্ষকও আছেন যারা সপ্তাহে দুই দিন বিভাগে আসেন। তাদের আবার দুই দিন ছুটির কি প্রয়োজন?’
শিক্ষার্থী মিতুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা না হওয়ায় আমরা সেশনজটের মুখে পড়েছি। এমন একটি পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের দুই দিন ছুটি দাবি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক’।
এর আগে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী এবং অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী উপাচার্য থাকাকালীন দু’বার সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একযোগে সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখলে সে উদ্যোগ আর কার্যকর হয়নি।
দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক মঞ্চের মুখপাত্র রায়হান রাইন বলেন, সপ্তাহে দু’দিন ছুটি এতোদিন প্রয়োজন মনে হয়নি, এখন প্রয়োজন হচ্ছে কেন? খুব সহজ হিসেব, বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে সান্ধ্যকালীন ও সাপ্তাহিক কোর্সই মূলত দুই দিন ছুটি করার প্রধান কারণ। এর মাধ্যমে নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষার গতি কমে যাবে। এমনিতেই শিক্ষকরা ছুটি আর ক্লাসের পার্থক্য করতে পারেন না। যে সকল শিক্ষক সপ্তাহে বা মাসে একদিন বিভাগে আসেন, তাদের কাছে সপ্তাহে দু’দিন বা একদিন ছুটির পার্থক্যটা কি হয় সেটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। যারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, সান্ধ্যকালীন ও সাপ্তাহিক কোর্সগুলো পড়ান তাদের কথা মাথায় রেখে মূলত এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে’।
অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুর রহমান বলেন, প্রশাসনিক কার্যক্রমে এ ছুটি অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। প্রশাসনিক এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল আছে, যেগুলো নিদিষ্ট সময়ে স্বাক্ষরিত না হলে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। এমনিতেই নানা কারণে ও প্রশাসনিক জটিলতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল অনেকদিন আটকে থাকে। আর যদি ছুটি বৃদ্ধি পায় তাহলে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দাঁড়াবে।
কর্মচারী সমিতির সভাপতি মো. আয়নাল হক বলেন, কোন স্বার্থে শিক্ষক সমিতি সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দাবি করেছে সেটা বুঝতে পারছি না। এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট লেগেই থাকে। আর যদি ছুটি বৃদ্ধি পায় তা আরও বাড়বে। স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নিয়মের কোনো মানে হয় না।
শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, সাপ্তাহিক দুইদিন ছুটি হলে শিক্ষক ও সাপোর্ট স্টাফদের কর্মঘন্টা বৃদ্ধি পাবে। ফলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন, না বরং লাভবান হবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৬
এএসআর