ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কুয়েট প্রশাসন!

মাহবুবুর রহমান মুন্না, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৬
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কুয়েট প্রশাসন! ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন। বহিরাগতরা বার বার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, ভাংচুর-  লুটপাট করলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভের আগুনে পুড়ছেন শিক্ষার্থীরা।

সর্বশেষ রোববার (০২ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এম এ রশিদ হল ও শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক হলে বহিরাগতদের হামলা, গুলি বর্ষণ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, গার্ড, ডাইনিং বয়সহ ১০ জন আহত হয়েছেন।
 
প্রতিবাদে সোমবার (০৩ অক্টোবর) সাধারণ শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জনের মাধ্যমে ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করছে। এ সময় তারা অডিটোরিয়ামসহ প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের সামনে অবস্থান নিয়ে নিরাপত্তা চেয়ে বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছেন।
 
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার রাতে বহিরাগতরা রশিদ হল ও ফজলুল হক হলে ধারালো অস্ত্র, চাপাতি ও পিস্তল নিয়ে ঢুকে প্রায় ২০-২৫ টি মোবাইল ও ১০-১২ টি ল্যাপটপ ছিনতাই করে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ১০ জন ছাত্র আহত হন। বর্তমানে তারা কুয়েট মেডিকেল সেন্টার ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহত শিক্ষার্থীরা জানান, তাদের দাবি একটাই, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই। এর আগেও এমন বহিরাগতদের হামলা ও লুটপাট হলে প্রশাসননিক ভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কোনো মাথা ব্যাথা নেই যা আমাদের হতাশ করছে।

বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ সভাপতি সোহানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যার সর্বশেষ উদাহরণ রোববার রাতে আবারও ১৫/২০ জন অস্ত্রধারী রশিদ হল ও ফজলুল হক হলের সাধারণ শিক্ষার্থী, গার্ড ও ডাইনিং বয়ের উপর যে হামলা চালিয়েছে।   আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি। এ জন্য ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে ধর্মঘট পালন করছি।
 
এম এ রশিদ হলের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, গত আড়াই বছরে ৩/৪ বার বহিরাগতদের কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীরা হামলা ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সিসি ক্যামেরার দাবি জানান।

সাধারণ শিক্ষার্থী বলছেন, ছাত্রলীগের নবঘোষিত হল কমিটি নিয়ে মতবিরোধের জের ধরে পদবঞ্চিতরা রোববার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা বহিরাগতদের সহায়তা নিয়েছে।
 
ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাফায়েত হোসেন নয়ন বাংলানিউজকে বলেন, ফজলুল হক হলের সামনে আমি ও সাধারণ সম্পাদক আলী ইমতিয়াজ সোহান অবস্থান করছিলাম। এ সময় অস্ত্র নিয়ে একদল বহিরাগত আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। অল্পের জন্য গায়ে লাগেনি। এ সময় ওই সব সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থী, গার্ড, ডাইনিং বয়সহ অন্তত ১০ জনকে পিটিয়ে আহত করে।

তিনি জানান, এছাড়া বঙ্গবন্ধু হলের ডাইনিং ম্যানেজারদের গণধোলাই দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কেননা তারা দীর্ঘদিন ধরে ডাইনিং এর টাকা আত্মসাৎ করে আসছিলো।
তিনি দাবি করেন, দুটি ঘটনার সঙ্গেই ছাত্রলীগ জড়িত না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বার বার বহিরাগতদের হামলায় সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হওয়া ও অস্ত্রের মহরায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
তারা বলছেন, দেশের সনামধন্য এ ক্যাম্পাসে যদি শিক্ষার্থীরা নিরাপদে না থাকে তাহলে কর্তৃপক্ষকেই সে ব্যর্থতার দায় নিতে হবে।

এ বিষয়ে কুয়েটের ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সঙ্গে বার বার মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

এদিকে ঘটনার পর থেকে কুয়েট প্রশাসন ক্যম্পাসে পুলিশ প্রবেশ করতে না দেওয়ায় প্রধান ফটকের সামনে পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৬
এমআরএম/বিএস

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।