জবি: নির্ধারিত ৬ মাসের সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হতে ক’মাস সময় লাগলো- সে প্রশ্ন না হয় বাদই থাকলো। কেবল সেমিস্টারের চূড়ান্ত বা সমাপনী পরীক্ষা শেষ হতেই সময় লাগলো ৬৪টি দিন! এই ‘কীর্তি’ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণিত বিভাগের! বিভাগটির ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার সমাপনী পরীক্ষায় এই দীর্ঘ সময় লাগলো।
ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষারও এমন দীর্ঘসূত্রিতায় সেশনজট তৈরি হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তারা এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করছেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি শুরু হয় চতুর্থ সেমিস্টারের ক্লাস, শেষ হয় ২২ জুলাই। এরপর ১ আগস্ট শুরু হয় সেমিস্টারের পাঁচটি তত্ত্বীয় পরীক্ষা, শেষ হয় ১৭ আগস্ট। তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষে দু’বার ল্যাব ও মৌখিকের (ভাইভা) তারিখ ঘোষণা করা হলেও ওইসময় হল আন্দোলনের কারণে তা পেছানো হয়। সবশেষ ২১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় দু’টি ল্যাব পরীক্ষা ও ভাইভা, শেষ হয় গত ৩ অক্টোবর। অর্থাৎ এ সমাপনী পরীক্ষা শেষ হতে লেগে যায় পুরো ৬৪ দিন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া আমাদের অন্য বিভাগের বন্ধুরা তাদের ষষ্ঠ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অথচ শিক্ষকদের তদারকির অভাবে আমাদের পরীক্ষাই শেষ হলো ৬৪ দিনে। এখনও পঞ্চম সেমিস্টারের কোনো ক্লাস শুরু হয়নি।
এই ধারা চলতে থাকলে বিভাগে বড় ধরনের সেশনজট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, এর মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে পিছিয়েও পড়ছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বাংলানিউকে বলেন, ক্লাসরুম সংকট, শিক্ষক সংকট এবং শিডিউল অনুযায়ী ক্লাস না নেওয়ায় ৬ মাসের সেমিস্টার পার করতে ৯-১০ মাস লাগছে। এছাড়া পরীক্ষা নিতেও গড়িমসি দেখা গেছে। এর ফলে আমাদের শিক্ষাজীবন থেকে মূল্যবান এক থেকে দেড় বছর সময় বেশি ব্যয় হবে বলে মনে হচ্ছে।
কথা বলে জানা যায়, এই বিভাগের অন্যান্য ব্যাচেও রয়েছে বেশ বড় সেশনজট। গণিতের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের ব্যাচ এখনও অনার্সে অধ্যয়নরত। অথচ ম্যানেজমেন্টের তার পরের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ব্যাচ এমবিএ প্রথম সেমিস্টার শেষ করে ফেলে সমাপনীর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা গ্রহণ প্রসঙ্গে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, এটা নিউজ হওয়ার মতো কোন বিষয় নয়, হল আন্দোলনের সময় অন্য কোনো বিভাগ পরীক্ষা শুরু না করলেও আমরা শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেওয়ার জন্যই পরীক্ষা শুরু করেছিলাম। কিন্তু হলের আন্দোলনের জন্য মাঝপথে পরীক্ষা বন্ধ করতে বাধ্য হই। যার কারণে হয়তো এতো সময় লেগেছে।
দু’মাসেরও বেশি সময় পরীক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আক্তারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমি আসলে এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে অবগত নই। আসলে মাস্টার্সের কোনো কোর্স হলে এমনটা হয়। গ্রুপ বেশি থাকে, তাই সময় বেশি লাগে। হয়তো কোনো সমস্যা ছিল, তাই লেট হয়ে থাকতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৬
ডিআর/এইচএ/