জবি: বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সাফল্য ও গৌরবের ১১ বছর অতিক্রম করে এক যুগে পা রাখছে দেশের অন্যতম স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যেই বর্ণিল সাজে সেজে উঠেছে ২০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রাণের জবি।
১৮৫৮ সালে আজকের জবির শুরুটা স্কুল (ঢাকা ব্রাহ্ম স্কুল) দিয়ে হলেও ১৮৮৪ সালে এটি একটি দ্বিতীয় শ্রেণির কলেজে ও ১৯০৮ সালে প্রথম শ্রেণির কলেজে পরিণত হয়। আইএ, আইএসসি, বিএ (পাস) শ্রেণি ছাড়াও ইংরেজি, দর্শন ও সংস্কৃতিতে অনার্স এবং ইংরেজিতে মাস্টার্স কোর্সও নেওয়া শুরু হয় এখানে (১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়) ।
শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা ও বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন ও সংগ্রামে শামিল হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ’৫২’র ভাষা আন্দোলন, ’৬২-তে সামরিক সরকারের শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, ’৬৬’র ছয়দফা দাবি, ’৬৮’র এগারো দফা, ’৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ’৭১’র মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।
নিজেদের কোনো আবাসিক হল না থাকার পরেও নিউমার্কেট এলাকায় নিজের সম্পত্তির ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল নির্মাণের করে সৃষ্টি করেছে দানশীলতার মহান দৃষ্টান্তও।
২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে আইন পাসের পর ওই বছরের ২০ অক্টোবর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করে সরকার। সেই থেকে ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করছে জবির শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
প্রতিবারের মতো এবারও রঙিন আলোয় সেজে উঠেছে জবি। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ভাস্কর্য চত্বর, শহীদ মিনার প্রাঙ্গন, ভাষা শহীদ রফিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, বিজ্ঞান অনুষদের বিল্ডিং সব জায়গাতেই আলোর ঝিলমিল, যেন নতুনভাবে সেজে উঠেছে জবি।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এখানেই পারফর্ম করবেন জনপ্রিয় দুই ব্যান্ডদল নগরবাউল জেমস ও শিরোনামহীন।
এদিকে, অন্যান্য সময় বিকেল ৪টার পরেই যেখানে জবি ক্যাম্পাসে সুনসান নীরবতা নেমে আসে বুধবার(১৯ অক্টোবর) রাত ১১টাও সময়েও উৎসুক মানুষ ও পুরান ঢাকায় বসবাসরত শিক্ষার্থীদের জমজমাট আড্ডা চলছে। কেউ শান্ত চত্বরে বসে অশান্ত গলায় গলা ফাটিয়ে গাইছেন গান, কেউ ব্যস্ত সেলফি তোলায়! আবার কেউ কেউ পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়েও দেখতে এসেছেন প্রাণের জবি কিভাবে সেজেছে তার জন্মদিনে!
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী বি এম সাবাব বাংলানিউজের কাছে তার অনূভুতি জানাতে গিয়ে বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বাংলাদেশের সেরা অনুষ্ঠান জবিতেই হচ্ছে।
জবি সব ক্ষেত্রেই অন্য সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ছাড়িয়ে যাবে খুব শিগগিরই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আরেকটু সু্যোগ সুবিধে পেলে বিশ্বের মানুষের কাছে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে।
নিজের ক্যাম্পাসের বর্ধিত রুপ দেখতে আসা সমাজকল্যাণ বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী তানজীনা শিমু বাংলানিউজকে বলেন, আজ আমার প্রিয় ক্যাম্পাসকে অন্যরকম মনে হচ্ছে। অনেকেই এসেছে আড্ডায় মেতেছে। আমাদের হল থাকলে সবসময় এভাবে ক্যাম্পাসে সময় কাটাতে পারতাম। ১ যুগে পা রাখছে জবি কিন্তু কোনো হল নেই, এটা মানা যায় না। আমরা চাই দ্রুত আমাদের হলের ব্যবস্থা হোক।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের প্রস্তুতি সম্পর্কে জবি ছাত্রলীগ সভাপতি ও উদযাপন কমিটির সদস্য এফ এম শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রায় শতভাগ কাজই শেষ হয়েছে। আশা করি, আমরা বৃহস্পতিবার(২০ অক্টোবর) খুবই ভালো একটি দিন সব শিক্ষার্থী উপহার দিতে পারব।
এদিকে, ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য রাত থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৬
ডিআর/পিসি