ঢাকা: সরকারি স্কুলের মতো ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে এবারও ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা নির্ধারণ করে বেসরকারি স্কুলে ভর্তির নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
বেসরকারি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সেশনসহ অন্যান্য ফি নির্ধারণ করে দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, অতিরিক্ত ফি নিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত বছর থেকে ঢাকা মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা চালু করা হয়।
ঢাকা মহানগরী, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে তিনটি আলাদা কমিটিও গঠন করে দিয়েছে সরকার।
মঙ্গলবার (০৮ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর বেসরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে স্কুল সংলগ্ন ক্যাচমেন্ট এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করতে হবে। অবশিষ্ট আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
তবে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে এলাকা কোটা প্রযোজ্য হবে না।
আর একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একই ক্যাচমেন্ট এলাকায় থাকলে শিক্ষার্থীরা উভয় প্রতিষ্ঠানেই ভর্তির আবেদন করতে পারবে।
ক্যাচমেন্ট এলাকা নির্ধারণে কোনো এলাকা যেন বাদ না পড়ে, সেদিকে সতর্ক থাকতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ক্যাচমেন্ট এলাকা নিয়ে থানা/উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশে কেউ অসন্তুষ্ট হলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করতে পারবেন। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আদেশই চূড়ান্ত।
প্রথম শ্রেণিতে অবশ্যই লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে হবে। লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা ছাড়াও অপেক্ষমান তালিকা করতে হবে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা নির্ধারিত তারিখের মধ্যে ভর্তি না হলে এ অপেক্ষমান তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
দ্বিতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির শূন্য আসনে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাক্রম অনুসারে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করতে হবে। আর নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে জেএসসি-জেডিসির ফলের ভিত্তিতে।
প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিশুর বয়স কমপক্ষে ছয় বছর হতে হবে। এ বয়স যাচাইয়ে ভর্তির আবেদনপত্রের ফরমের সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত কপি জমা দিতে বলেছে সরকার।
শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগে পরিচালনা পর্ষদ ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারণ করবে। তবে একই ক্যাচমেন্ট এলাকার ভর্তি পরীক্ষা ভিন্ন ভিন্ন দিনে নিতে হবে। ঢাকা মহানগরীর বিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি সংশ্লিষ্ট থানা বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নির্ধারণ করবেন।
ভর্তির জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটনসহ এমপিওভুক্ত, আংশিক এমপিওভুক্ত এবং এমপিও বর্হিভূত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদনপত্রের দাম হবে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা।
মফস্বল এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিতে সেশন ফিসহ সর্বোচ্চ ভর্তি ফি ৫০০ টাকা, পৌর (উপজেলা) এলাকায় এক হাজার টাকা, পৌর (জেলা সদর) এলাকায় দুই হাজার টাকা এবং ঢাকা ছাড়া অন্য মহানগর এলাকায় তিন হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীর এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থী ভর্তিতে পাঁচ হাজার টাকা এবং আংশিক এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আট হাজার টাকা এবং ইংরেজি মাধ্যমের প্রতিষ্ঠান ১০ হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না।
নীতিমালা অনুসারে, উন্নয়ন খাতে কোনো প্রতিষ্ঠান তিন হাজার টাকার বেশি আদায় করতে পারবে না। একই প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের এক শ্রেণি থেকে পরের শ্রেণিতে ভর্তিতে সেশন চার্জ নেওয়া যাবে না, তবে পুনঃভর্তির ফি নেওয়া যাবে।
ভর্তি ফরম এবং ভর্তি ফি বাবদ সরকার নির্ধারিত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে এমপিও বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং সন্তান পাওয়া না গেলে তাদের নাতি-নাতনিদের জন্য যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে পাঁচ শতাংশ কোটা রাখতে হবে। প্রতিবন্ধীদের বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই শতাংশ কোটা।
লিল্লাহ বোডিংয়ের শিশুদের যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে এক শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের ভর্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার প্রতিষ্ঠানে দুই শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে।
কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহোদর বা যমজ ভাই বা বোন যদি আগে থেকেই অধ্যয়ন করে তাদের আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে ভর্তিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তবে এ সুবিধা কোনো দম্পতির সর্বোচ্চ দুই সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৬
এমআইএইচ/এএসআর