ঢাকা: বত্রিশ লাখ শিক্ষার্থী নিয়ে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা শুরু হচ্ছে রোববার (২০ নভেম্বর)। তবে এবার গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থী কমেছে ২৪ হাজার।
প্রাথমিক সমাপনীতে এবার ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৫৭৩ জন এবং ইবতেদায়ি সমাপনীতে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭১৫ জনসহ মোট ৩২ লাখ ৩০ হাজার ২৮৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেবে। প্রাথমিকে ছাত্রসংখ্যা ১৩ লাখ ৪৬ হাজার ৩২ জন এবং ছাত্রী ১৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫৪১ জন।
আর ইবতেদায়িতে ছাত্র এক লাখ ৫৭ হাজার ৩১৯ জন এবং ছাত্রী এক লাখ ৪২ হাজার ৩৯৬ জন।
পরীক্ষা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
দেশের বাইরে ১১টিসহ সারা দেশে সাত হাজার ১৯৪টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষায় শেষ হবে আগামী ২৭ নভেম্বর।
প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিক্ষার্থীরা অন্যবারের মতো এবারও অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবে।
২০১৫ সালে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনীতে মোট ৩২ লাখ ৫৪ হাজার ৫১৪ পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। এরমধ্যে প্রাথমিক সমাপনীতে ২৯ লাখ ৪৯ হাজার ৬৩ জন ও ইবতেদায়িতে ৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।
এরআগে ১৬ জুলাই পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভা শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, এবার প্রাথমিক সমাপনীতে ৩১ লাখ ২৫ হাজার জন ও ইবতেদায়িতে ৩ লাখ ২০ হাজার জনসহ সম্ভাব্য মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৪ লাখ ৪৫ হাজার, যা গত বছরের থেকে ২ লাখ ৪৫ হাজার বেশি।
কিন্তু গতবছরের তুলনায় প্রাথমিক সমাপনীতে ১৮ হাজার ৪৯০ এবং ইবতেদায়িতে পরীক্ষার্থী কমেছে ৫ হাজার ৭৩৬ জন। অথচ সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর ব্রিফ করা কাগজে জানানো হয়, গত বছরের তুলনায় প্রাথমিকে ৯১ হাজার ৩৩৫ জন এবং ইবতেদায়িতে ৩৫ হাজার ৫৮১ জন শিক্ষার্থী বেড়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল এবং ইবতেদায়িতে এ পরীক্ষা শুরু হয় ২০১০ সালে। প্রতিবছরই শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেলেও এবার তার ব্যতয় ঘটেছে।
পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোন কারণে ছাত্র-ছাত্রী কমে যেতে পারে আমি জানি না ঠিক। প্রতিবছরে কমবে বা বাড়বে এটা ছাত্রসংখ্যার উপর নির্ভর করবে। জন্মহার কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটা হিসাব-নিকাশের ক্ষেত্রে কম-বেশি হতে পারে।
মন্ত্রী বলেন, ব্যবস্থাপনার মধ্যে স্বচ্ছতার মাত্রা বোধহয় বাড়ছে, সে কারণেই ভুলত্রুটিগুলো থাকলে সংশোধনের আওতায় চলে আসবে। আমার মনে হয় সে রকমও হতে পারে। নিবন্ধনের পর পরীক্ষায় অংশগ্রহণজনিত হিসাব-নিকাশের কারণ হতে পারে।
সমাপনী পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে সরকার। প্রাথমিক সমাপনীতে এবার ৩৩ হাজার ট্যালেন্টপুল ও ৪৯ হাজার সাধারণ কোটাসহ মোট ৮২ হাজার ৫০০ জনকে বৃত্তি প্রদান করা হবে বলে এরআগে জানায় মন্ত্রণালয়। ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ কোটায় বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা যথাক্রমে ৩০০ ও ২২৫ টাকা হারে বৃত্তি পায়।
এবার প্রাথমিকে দুই হাজার ৮৫৭ জন এবং ইবেতেদায়িতে ৯০ জন অটিস্টিক শিক্ষার্থী অংশ নেবে।
প্রথম দুই বছর বিভাগভিত্তিক ফল দেয়া হলেও ২০১১ সাল থেকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল দেয়া হচ্ছে। ২০১৩ সাল থেকে এ পরীক্ষার সময় আধ ঘণ্টা বাড়িয়ে আড়াই ঘণ্টা করা হয়।
চলতি বছরের পরীক্ষা শেষে ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ আসিফ-উজ-জামান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
পরীক্ষার বিস্তারিত সূচি
প্রাথমিক সমাপনীতে ২০ নভেম্বর ইংরেজি, ২১ নভেম্বর বাংলা, ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২৩ নভেম্বর প্রাথমিক বিজ্ঞান, ২৪ নভেম্বর ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা এবং ২৭ নভেম্বর গণিত বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আর ইবতেদায়িতে ২০ নভেম্বর ইংরেজি, ২১ নভেম্বর বাংলা, ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ২৩ নভেম্বর আরবি, ২৪ নভেম্বর কুরআন ও তাজবীদ এবং আকাইদ ও ফিকহ এবং ২৭ নভেম্বর গণিত বিষয়ের পরীক্ষা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় ঢাকার লালবাগের অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন।
নিয়ন্ত্রণ কক্ষ:
পরীক্ষার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দুর্গম এলাকার ২১০টি কেন্দ্রেও বিশেষ ব্যবস্থায় প্রশ্ন পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের নম্বর ০২৯৫১৫৯৭৭ এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নম্বর ০২৫৫০৭৪৯৩৯, ০১৯৭৯০৮৮৭১৯, ০১৭১২৪১৩১০০, ই-মেইল: [email protected].
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
এমআইএইচ/এটি/এসএইচ