ক্রটিপূর্ণ এ পদ্ধতিতে সঠিকভাবে মেধা মূল্যায়ন হচ্ছে না বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা এ পদ্ধতির পরিবর্তে একটি ইউনিটের পরীক্ষা একটি শিফটে নেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (৮ অক্টোবর) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষের ৯ দিনব্যাপী ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দুদিন ধরে ‘এ’ ইউনিটে ৯টি শিফটে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। একইভাবে ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষা দুই দিনে ১০টি শিফটে নেওয়া হবে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিটগুলোর পরীক্ষা ৪ থেকে ৫টি শিফটে নেওয়া হবে।
এ পদ্ধতি এক ধরনের প্রশ্ন ফাঁসের নমান্তর বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, যদি একটি শিফটে প্রশ্ন থাকে কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম তারিখ কবে, প্রশ্নের ধরন যদি একই হয় তাহলে অন্য শিফটের প্রশ্ন থাকবে কাজী নজরুল ইসলামে মৃত্যুর তারিখ কবে। আর যদি প্রশ্নের ধরন ভিন্ন হয় তাহলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভর্তি পরিচালনা কমিটির এক সদস্য বাংলানিউজকে জানান, গত বছর এমনও ঘটনার রেকর্ড রয়েছে যে, একটি শিফট থেকে ৭০-৭৫ শতাংশ চান্স পেয়েছে, আর বাকি ৪-৫ শিফট থেকে মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ চান্স পেয়েছে।
২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ ইউনিটের (গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ছয়টি শিফটে। এই অনুষদে ছেলেদের ২৭০টি আসনের বিপরীতে ২৭৩৯ জনের মেরিট লিস্ট এবং মেয়েদের ১৮০টি আসনের বিপরীতে ১৮২৩ জনের মেরিট লিস্ট প্রকাশ করা হয়।
ফলাফলে প্রথম শিফটে ৬০৩ জন ছাত্র ও ৫১৩ জন ছাত্রী এবং দ্বিতীয় শিফটে ৬২১ জন ছেলে ও ৫২৬ জন মেয়ে চান্স পায়। এই অনুষদেই চতুর্থ শিফটে ৬৭ জন ছেলে ও ৩১ জন মেয়ে চান্স পায়। যদিও প্রত্যেকটি শিফটে প্রায় একই সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়।
শিফট পদ্ধতিতে সঠিকভাবে মেধা মূল্যায়ন না হওয়ার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাচ্ছে না, বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বুঝতে পেরেও সমাধানের পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।
একই ইউনিটের পরীক্ষা একাধিক শিফটে নেওয়া হলে সঠিকভাবে মেধা মূল্যায়ন করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশিষ্ট পদার্থ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এ. এ. মামুন বলেন, এ পদ্ধতিতে সঠিক মেধা মূল্যায়ন সম্ভব নয়, কিছু তারতম্য থাকবেই। তবে যদি সিট সংখ্যা অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসটি পরীক্ষার রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ফরম উঠানোর সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে একটি শিফটে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আফসার আহমদ বলেন, শিক্ষার্থীদের পছন্দের সাবজেক্ট অনুযায়ী এক শিফটে পরীক্ষা নিলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সনোয়ার হোসেন বলেন, একই দিনে পরীক্ষার জন্য জায়গার সমস্যা হলে নিরাপত্তা বলয়ে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিপিএটিসি স্কুল এন্ড কলেজ ও সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ভাল কোনো পরীক্ষা পদ্ধতি অবশ্যই গ্রহণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৭
জেডএম/