প্রশ্নপত্র ফাঁস জালিয়াতির ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ ও উদ্ধারকৃত ডিভাইস বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা।
সিআইডি’র কর্মকর্তারা বলছেন, তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় এ চক্রের সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই কর্মচারীকে শনাক্ত করা গেছে।
এর আগে গত ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে প্রশ্নপত্র ফাঁস জালিয়াতি চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এদের মধ্যে চক্রের মূলহোতা ঢাবি’র অ্যাপ্লাইড ক্যামিস্ট্রি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবদুল্লাহ আল মামুন এবং ফিজিক্সের মাস্টার্সের (ছাত্রলীগ নেতা) ছাত্র মহিউদ্দিন রানা এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে অসদুপায় অবলম্বনকারী ইশরাক আহমেদ রাফীকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসসহ ১২ জনকে গ্রেফতার করে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রত্যেককে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সিআইডি’র অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে প্রশ্নফাঁসের চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা পুরো সিন্ডিকেট ধরতে চেষ্টা চালাচ্ছি। তবে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত মূলহোতারা ধরা পড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ চক্রের সদস্যরা আধুনিক একটি কমিউনিকেশনস ডিভাইস (মাস্টার কার্ড সদৃশ) ও অতিক্ষুদ্র এয়ারপিস ব্যবহার করে পরীক্ষার হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রশ্নের উত্তর বলে দিতো। শিক্ষার্থীরা মাস্টার কার্ড সদৃশ ওই ডিভাইস মানিব্যাগে রেখে কানে এয়ারপিস দিয়ে অপর প্রান্তে প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতো। পরীক্ষার্থীরা প্রশ্ন পেয়ে সেট নম্বর বললেই ওপার থেকে উত্তর বলে দিতো গ্রেফতারকৃতরা।
সিআইডি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চক্রটির সদস্যরা অভিনব এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন কোচিং সেন্টার এবং ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ঢাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ (জাবি) অন্যান্য ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ঢাবি’র বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষাগুলো প্রশ্নপত্র ফাঁস জালিয়াতি চক্রের সঙ্গে অনেক ‘রাঘব-বোয়ালও’ জড়িত রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার নিয়ম অনুযায়ী, প্রশ্ন চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর তা টাইপ করা শুরু করে। প্রেসে ছাপা হওয়ার পর নির্দিষ্ট প্যাকেট সিলগালা হয়ে কেন্দ্রে যাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এ ধাপগুলোতে সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনের সরাসরি তদারকি থাকে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কোর কমিটির কোনো ব্যক্তি নয়তো যিনি প্রশ্নপত্র টাইপ করেন তিনিও ফাঁস করতে পারেন। অথবা নজরদারির ঘাটতি থাকলে প্রেস থেকে প্যাকেট করার সময়ও ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যেতে পারে।
তাই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে পরীক্ষার হলে পৌঁছা পর্যন্ত প্রত্যেকটি ধাপে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আরও নজরদারি বৃদ্ধির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৭
এসজেএ/জেডএস