এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।
পরিবহন অফিস সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি লিমিটেড তথা ‘অরুণাপল্লী’তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় অংশের শিক্ষকরা বসবাস করেন।
এ নিয়ে একাধিক বাস ড্রাইভার অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, অরুণাপল্লীতে বসবাসকারী অধিকাংশ শিক্ষককের নিজস্ব গাড়ি রয়েছে। তাই তাদের জন্য ট্রিপ বাস সার্ভিস চালু রাখার প্রয়োজন নেই। অধিকাংশ সময় দেখা যায়, দুই-একজন ছাড়া বাসে আর কোনো যাত্রী নেই।
অরুণাপল্লীতে বসবাসকারী একজন সচেতন শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, আসলে ১৪ ট্রিপ বাস সার্ভিস অযৌক্তিক। এতে বিশ্ববিদ্যালয় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়াও এর কারণে শিক্ষার্থীরা বাস সার্ভিস ঠিকভাবে পাচ্ছে না। শিক্ষকদের জন্য দিনে একটি নির্দিষ্ট সময়ে দুই বা তিন ট্রিপ বাস সার্ভিস চালু থাকলেই যথেষ্ট।
এছাড়া সকালে ঢাকা থেকে ৬টি এসি বাস শিক্ষকদের নিয়ে আসে। দুপুরে ৪টি ও বিকালে আরো ৫টি বাস শিক্ষকদের ঢাকায় নিয়ে যায়। বিকালে ৪টি বাস বরাদ্দ থাকলেও শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আরো একটি বাস অতিরিক্ত দেয়া হয়েছে।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানদের সাভার ক্যান্টমেন্ট স্কুল ও কলেজ, মনিংগ্লোরি স্কুল, জিরাবো ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুলে যাতায়াতের জন্য ১২ ট্রিপ বাস সার্ভিস চালু রয়েছে। পরীক্ষার সময় কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে অতিরিক্ত ট্রিপ দেওয়া হয়। এছাড়ও শুক্র ও শনিবার বাজার করার জন্যও আলাদ ট্রিপ রাখা আছে। শুধু বাস নয়, রয়েছে মাইক্রোবাসও। যা শুধু শিক্ষকরাই ব্যবহার করতে পারেন।
এদিকে ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য দিন ও রাত মিলে তিন-বেলা মাত্র ৫টি বাস বরাদ্দ রয়েছে। ক্লাস বন্ধের দিন বাসের সংখ্যা কম থাকবে বলে কঠিন শর্ত জারি আছে। শুধু প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য আরো ৪টি বাস রাখা আছে। তবে তা শুধু ক্লাস চলার সময়ের জন্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবহন অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, শুধু অরুণাপল্লীই নয় এরই মধ্যে ভাটপাড়া সোসাইটিতে (শিক্ষকদের আবাসস্থল)বাস সার্ভিস চালুর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যা অতি দ্রুত কার্যকর করা হবে। এভাবে শিক্ষকদের নানামুখি চাপে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। শিক্ষকদের জন্য বাস
সার্ভিস বেশি থাকায় শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে দাঁড়িয়ে, গাদাগাদি করে যেতে হয়। অথচ আমরা তাদের জন্য অতিরিক্ত বাস দিতে পারি না।
২০১৬ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত বাসের ভাড়া বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন খাতে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭১ লক্ষ ৮৫ হাজার ৪৬৯ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র ৫টি বাস। যাতে গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। অনেক সময় এতবেশি শিক্ষার্থী হয় যে অনেকে বাসে উঠতেই পারে না। যা খুবই কষ্টকর আর বিব্রতকর। মাত্র ৬’শত শিক্ষকের রাজ্যের সব সুযোগ-সুবিধা। এর সামান্য ছিটেফোটাও কি আমরা শিক্ষার্থীরা পেতে পারি না? আমাদেরই জন্যই তো শিক্ষক!
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি ইমরান নাদিম বলেন, অরুণাপল্লী তো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অংশ না, যে সেই পারপাসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যয় করবে। এটা শিক্ষকদের নিজস্ব আবাসস্থল। এখানে দিনে এতবার বাস সার্ভিসের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তবে শিক্ষকদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন দুই বা তিনটি ট্রিপ দিতে পারে। তবে তা শর্তসাপেক্ষে(যা খরচ হয় সেই
পরিমাণ অর্থ প্রদান করা)। এত সুবিধা দিলে কেন টাকা খরচ করে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে থাকবে। কোয়ার্টার তো খালি পড়ে থাকবেই। এখাতেও তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আমির হোসেন বলেন, দুই একবার যাতায়াত করেতে পারে। এখানে এতবার যাতায়াত ও এত টাকা খরচ হচ্ছে এটা-তো জানাই ছিল না। পরিবহন অফিসে যারা দায়িত্ব রয়েছেন তাদেরকে বলে অতি দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৬২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৭
জেএম