ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

নীতিমালা ছাড়াই শেকৃবিতে শিক্ষকদের পদোন্নতি

মহিবুল আলম সবুজ, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৭
নীতিমালা ছাড়াই শেকৃবিতে শিক্ষকদের পদোন্নতি

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি): প্রতিষ্ঠার প্রায় ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পদোন্নতির বিষয়ে এখনও কোনো নিজস্ব নীতিমালা তৈরি করতে পারেনি কৃষিবিদ্যায় দেশের অন্যতম উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি)।

ফলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করেই চলছে এখানকার শিক্ষকদের পদোন্নতি ও নিয়োগ।  
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে নিজস্ব কোনো নীতিমালা না থাকায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) নীতিমালা অনুসরণ করা হয়।

তবে যতটুকু শেকৃবি প্রশাসনের অনুকূলে যায়, ঠিক ততটুকুই অনুসরণ করা হয়। বাকিটা সুবিধামতো পরিমার্জন করে নেওয়া শেকৃবি প্রশাসনের অলিখিত নিয়ম।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে শেকৃবির নিজস্ব কোনো নীতিমালা নেই। তবে শেকৃবি আইনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এ সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসরণ করার কথা বলা রয়েছে।  

নীতিমালা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাকৃবির রেজিস্ট্রার সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ২০০৯ সালের ২৪ অক্টোবর বাকৃবির সিন্ডিকেটের ২৯১তম অধিবেশনে ১০ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। সে অনুযায়ী, শিক্ষকদের প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রার্থীদের কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমএসসি/এমএস/এমফিল ডিগ্রিসহ অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কমপক্ষে দুই বছরের অভিজ্ঞতা এবং স্বীকৃত জার্নালে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একটি গবেষণা প্রকাশনা থাকতে হবে।  

তবে এই নীতিমালা অনুসরণ না করেই গত বছর ১৪ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ১১ শিক্ষককে পদোন্নতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।  

অভিযোগ ওঠেছে, এই ১১ জনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমএস (স্নাতকোত্তর) বা সমমানের  ডিগ্রি না থাকা সত্ত্বেও অনেককে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।  

নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতা স্নাতক থাকায় স্নাতকোত্তর না করেও নিয়োগ পেয়েছিলেন এই ১১জন। পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকরা প্রভাষক হিসেবে দুই বছর পার করলেও তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কিংবা কোনো প্রকাশনা ছিলো না।
  
অনুসন্ধানে জানা যায়, পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকদের মধ্যে মেফতাউল ইসলাম সৈকত স্নাতকোত্তর করেছেন উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে কিন্তু পদোন্নতি পেয়েছেন কৃষি রসায়ন বিভাগে। আব্দুল কাইয়ুম স্নাতকোত্তর করেছেন কৃষি বোটানিতে কিন্তু পদোন্নতি পেয়েছেন কৃষি রসায়ন বিভাগে।  

শিমুল চন্দ্র সরকার কৃষিতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর হলেও পদোন্নতি পেয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে। আরিফ হোসেন কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে স্নাতকোত্তর করে প্রাণ রসায়ন বিভাগে পদোন্নতি পেয়েছেন।  

মির্জা মোবাশ্বের উল হক স্নাতকোত্তর করেছেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগে কিন্তু পদোন্নতি পেয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে। মঞ্জুরী আক্তার মুন্নী কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে কিন্তু পদোন্নতি পেয়েছেন কীটতত্ত্ব বিভাগে। নিপা মোনালিসা কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে এমএস করে পদোন্নতি পেয়েছেন প্রাণ রসায়ন বিভাগে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অভিযোগ করেন, পদোন্নতি পাওয়াদের মধ্যে সাত শিক্ষক যে বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেছেন এবং যে বিষয়ে পাঠদান করছেন, তার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এ বিষয়টি আমলে না নিয়েই পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।  

জানা যায়, এই সাত শিক্ষকের মধ্যে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগের দু’বছর পর চলতি বছরে বিভাগ পরিবর্তন করেছেন তিনজন। এর মধ্যে শিমুল চন্দ্র সরকার ও  মির্জা মোবাশ্বের উল হক স্নাতকোত্তর করেছিলেন কৃষিতত্ত্ব বিভাগে। কিন্তু নিয়োগ পেয়েছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে।  

নিপা মোনালিসা স্নাতকোত্তর করেছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ ও ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগে। তবে নিয়োগ পান প্রাণ রসায়ন বিভাগে। পরবর্তীতে তারা যে বিভাগে স্নাতকোত্তর করেছেন, সে বিভাগে শিক্ষকতার সুযোগ চাইলে অনুমোদন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।
 
এদিকে রেজয়ানা নিজাম বন্যা স্নাতকোত্তর করেছেন উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে কিন্তু পদোন্নতি পেয়েছেন কৃষি বোটানি বিভাগে। খোরশেদা পারভীন হীরা কৃষি বোটানিতে স্নাতকোত্তর করলেও পদোন্নতি পেয়েছেন উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে।  

তানিয়া সুলতানা স্নাতকোত্তর করেছেন কৃষি বোটানিতে কিন্তু পদোন্নতি পান কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে। ফেরদৌস বিনতে হাবিব মৌ স্নাতকোত্তর করেছেন উদ্যানতত্ত্ব বিভাগে কিন্তু পদোন্নতি পেয়েছেন কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে।

পদোন্নতিতে নীতিমালা না মানার বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ।

এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বলেন, ‘শেকৃবি আইনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অনেক শিক্ষকের ক্ষেত্রে নীতিমালা মানা হয়নি। এটা এখানকার প্র্যাকটিস হয়ে গেছে। সিনিয়র লেভেলেও একই অবস্থা। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৭
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।