শনিবার (১২ অক্টোবর) শিক্ষার্থীদের ৫টি দাবি মেনে নিয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি ছিল- আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে এখনই সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ১০১১ কক্ষের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদের অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক হত্যা ঘটনায় মামলায় এজাহারভুক্ত ১৯ জনকে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হল। এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। চলমান তদন্ত শেষে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের পর ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতে সিন্ডিকেটের অনুমোদনের মাধ্যমে দোষীদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। এছাড়া আদালতের মামলায় অন্য কেউ সাজাপ্রাপ্ত হলে তাদেরও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে।
দ্বিতীয় দফা দাবি ছিল, আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে, সেটাও নোটিশে লেখা থাকবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে পৃথক নোটিশে বলা হয়, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা চলাকালীন সব খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং ফাহাদের পরিবারকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া করা হবে।
শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দফা দাবি ছিল, বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সব হল থেকে অবৈধ ছাত্র উৎখাত করতে হবে। অবৈধভাবে হলের সিট দখলকারীদের উৎখাত করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস রুম সিলগালা করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর ভবিষ্যতে কেউ যদি এ রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হয় কিংবা কোনো রকম ছাত্র নির্যাতনে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- তা বিস্তারিত জানিয়ে নোটিশ জারি করতে হবে। পরবর্তীতে এটি যে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে। পাশাপাশি, এ ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কমিটি করতে হবে এবং কমিটি গঠনের বিষয়টিও নোটিশে উল্লেখ করতে হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সব রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হলো।
হলে অবৈধদের বিষয়ে বলা হয়, অবৈধভাবে যারা আবাসিক হলের সিট দখল করে আছে তাদের অতিদ্রুত হলের সিট খালি করা, সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিসরুম বন্ধ করে সিলগালা করার জন্য ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ব্যবস্থান নেবেন। ভবিষ্যতে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিন লঙ্ঘনের দায়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে র্যাংগিং বা ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ এলে তা ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
শিক্ষার্থীদের চতুর্থ দাবি, বুয়েটে পূর্বে ঘটে যাওয়া সব ছাত্র নির্যাতন, হয়রানি, র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা প্রকাশের জন্য বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের জন্য একটি কমিটি থাকতে হবে। বিষয়টি নোটিশের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।
এ দাবি অনুযায়ী প্রশাসন জানায়, র্যাগের নামে ছাত্র নির্যাতনের ঘটনা সংক্রান্ত অভিযোগ জমা দান ও প্রকাশের জন্য একটি ওয়েব বেইসড পোর্টাল তৈরি করা হবে যাতে কোনো ছাত্র একটি ফর্ম এর মাধ্যমে তার অভিযোগ অনলাইলে এ জমা দিতে পারবে। অভিযোগসমূহ পর্যবেক্ষণ করে ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।
পঞ্চম দাবি, প্রত্যেক হলের সব ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে- এই মর্মে নোটিশ আসতে হবে।
বুযেট প্রশাসন জানায়, সবগুলো হলের প্রত্যেক ফ্লোরের সব উইং এর দুই পাশে প্রয়োজনীয় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।
**বুয়েটে রাজনীতির নামে ছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড
**বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৫ শর্ত
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
এসকেবি/এসএইচ