ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

কোমলমতিদের শিক্ষানিকেতনে চিরস্থায়ী তালা

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
কোমলমতিদের শিক্ষানিকেতনে চিরস্থায়ী তালা এটি ছিল দীপশিখা স্কুল। বর্তমানে অন্যরা বাসা ভাড়া নিয়েছে। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: শিশুদের পায়ে পায়ে আর মুখরিত নেই শিক্ষাপ্রাঙ্গণ। এখন সেখানে তালা।

নেই প্রধানফটকজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ড। এমনকি নেই খোদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিও যথা স্থানে নেই। অন্যরা ভাড়া নিয়ে মুছে দিয়েছে শিশুবিদ্যালয়ের অস্তিত্বটুকু।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, করোনা প্রভাবে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি ১২ সেপ্টেম্বর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও তালাবন্ধ হয়ে রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার ৩০টি কিন্ডার গার্টেন (কেজি) স্কুল।

করোনার ক্ষতবিক্ষত প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ঝরে গেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি এহসান বিন মুজাহির বাংলানিউজকে বলেন, করোনার আগ পর্যন্ত জেলায় মোট ৪১৪টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল চালু ছিলো। এগুলো- কুলাউড়া উপজেলায় ১০৮টি, সদর উপজেলায় ৮৬টি, বড়লেখা উপজেলায় ৬৫টি, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ৪৮টি, রাজনগর উপজেলায় ৪৭টি, জুড়ি উপজেলায় ৩৩টি এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় ২৭টি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৪ হাজার ৬শ’ ৬৫ জন শিক্ষক ও ৫শ’ ২৫ জন কর্মচারী নিয়োজিত ছিল। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজারেরও বেশি শিশু শিক্ষার্থী পাঠদানে অংশ নিতো।  

তিনি বলেন, আমাদের সমিতির তথ্যানুযায়ী এ পর্যন্ত জেলার ৩০টি কিন্ডার গার্টেন স্কুল একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও আরো অনেক স্কুল অর্থাভাবে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেও শিক্ষকরা হয় চলে গেছেন নয়তো ছাঁটাই করতে হয়েছে। প্রায় ১৮ মাস এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়ে। শিক্ষার্থী না আসায় বেতন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এতে করে প্রায় সবগুলো প্রতিষ্ঠানে গড়ে ৫০ শতাংশ শিক্ষক-কর্মচারী চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

শুরু থেকে এসব স্কুলে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক স্কুলে পড়াশোনার জন্য যোগ্য করে তোলা হয়। এই স্কুলগুলো চলতো মূলত ব্যক্তি মালিকানায় ভাড়া নেওয়া বাসা বা ভবনে। মালিকরা শিক্ষক-কর্মচারীদেন বেতন, ভবন ভাড়া দিতে না পারায় স্কুলগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। আর বন্ধ হওয়া স্কুলগুলো আবার কখন খুলবে আদৌ খুলবে কিনা তা আমরা জানি না বলে জানান তিনি।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, করোনা শুরুর পর থেকে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাসের পর মাস স্কুলের ভবন ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ যোগাতে গিয়ে স্কুলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক বন্ধ বিদ্যালয়গুলো-শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পৌর শহরের বিজিবি সেক্টর সংলগ্ন দীপশিখা ফ্রি ক্যাডেট অ্যান্ড হাইস্কুল, সুরভী পাড়ার অক্সফোর্ড সায়েন্স স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে! 

টিকরিয়ার আজিজুন্নেসা আবদুল জব্বার কেজি স্কুল, নাইস মর্নিং, এভারেস্ট কেজি স্কুল বন্ধের পথে। বড়লেখা উপজেলায় নবারুণ কিন্ডারগার্টেন, আজিমগঞ্জ কিন্ডারগার্টেন স্কুল, শাবাজপুর কিন্ডারগার্টেন, মর্নিং বার্ড কেয়ার বন্ধ। জুড়ী উপজেলায় মেরিট কেয়ার কিন্ডারগার্টেন, মাতৃছায়া কিন্ডারগার্টেন, সমাই মডেল স্কুল বন্ধ। কুলাউড়া উপজেলায় আলোর দিশারী কিন্ডারগার্টেন, এম আর ইন্টারন্যাশনাল একাডেমি বন্ধ। রাজনগর উপজেলায় সজলবাড়ি একাডেমি বন্ধের পথে।

বন্ধ হওয়া কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলো চালুর বিষয়ে শিক্ষা বিভাগের করণীয় জানতে চাইলে মৌলভীবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শামসুর রহমান বলেন, ‘এটা জাতীয় সিদ্ধান্ত, যা আমরা নিতে পারি না। ’

‘কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলো নিয়ে আমাদের কোন মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। তবে কোন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের বাহিরে যাতে না থাকে সেজন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে সংযুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে’ বলে জানান জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।