জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): করোনা সংক্রমণের কারণে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ ছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় সশরীরে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আগামী ৭ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ফিরছেন জবি শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ক্যাম্পাসে আসার আগে শিক্ষার্থীদের কমপক্ষে ১ ডোজ টিকা নিশ্চিত করার নির্দেশনা ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীর টিকা নিশ্চিত করতে পারেনি জবি কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে টিকা কেন্দ্র স্থাপন করে শিক্ষার্থীদেরকে দ্রুত টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তার কোনো ব্যবস্থা হয়নি।
এরই মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মেডিক্যাল সেন্টারে টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু জবিতে এখনও পর্যন্ত তা না হওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও শিক্ষার্থীবান্ধব না হওয়াকেই দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও জবিতে টিকার বুথ না হওয়ার ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
জবি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ৭ অক্টোবর সশরীরে পরীক্ষার জন্য কেন্দ্র করে যেসব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীকে প্রথম ডোজ টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি, তাদের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরে গত ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত কোন কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়নি বলে বাংলানিউজকে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার।
রেজিস্ট্রার ওহিদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে টিকার বুথ স্থাপনের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানিয়েছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কিছু জানায়নি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দিক থেকে কোনো গাফিলতি নেই। কোনো সমস্যা আছে কিনা সেটাও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের জানাচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নিযুক্ত ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারে বুথ স্থাপনের জন্য। যাতে আমাদের শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নিয়ে আসতে পারি। আমি নিজে ব্যাক্তিগতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ করছি। কিন্তু তাদের আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমাদের টিকার বুথ পেতে দেরি হচ্ছে। তবে শিগগিরই বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকার বুথ হবে বলে আশা করি।
চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, জবি প্রশাসন আমাদের প্রতি উদাসীন, তারা শিক্ষার্থীবান্ধব না। যার কারণে এখন পর্যন্ত আমাদের টিকা নিশ্চিত করতে পারেনি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের কোনো মাথা ব্যাথা নেই। তারা শুধু নিজেদের সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করেন।
জবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে বুধবার (৬ অক্টোবর) টিকার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, কিন্তু আমরা পাইনি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কী পদক্ষেপ নিয়েছে তাও আমরা জানি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব ব্যাপারে কী করে না করে এগুলা আমরা কিছুই জানি না, দেখিও না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এখনও যারা টিকা নেননি তাদের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা দেশের সবচেয়ে মেধাবী মানুষ। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন পর্যন্ত টিকা নেননি। তাদের অনেক সুযোগ আছে টিকা নেওয়ার। তারা কেন নিচ্ছেন না আমি জানি না। তারাই যদি টিকা না নেয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের টিকার ব্যাপারে কীভাবে উৎসাহিত করবে।
এ ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দ্বায়িত্ব) ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করতে চাইলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এর আগে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার জন্য গত ৩ জুন ও ১৭ আগস্ট দুই ধাপে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব স্নাতক, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং এমফিল ও পিএইচডি গবেষকদের তালিকা স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠাতে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্য নেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রথম ধাপের তালিকা সুরক্ষা অ্যাপে যুক্ত হলেও দ্বিতীয় ধাপের তালিকার কাজ এখনও চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৬, ২০২১
এমএমজেড