জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): গত আড়াই মাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমঘটিত, অর্থনৈতিক চাপ ও পারিবারিক কলহে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন বলে তাদের স্বজনদের দাবি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার ২০ অক্টোবর নিজ কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণাকে উদ্ধার করা হয়। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সহপাঠীদের ও পরিবারের দাবি পড়াশোনার অতিরিক্ত মানসিক চাপে তিনি আত্মহত্যা করতে পারেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশ পোল মধুমাল্লার ডাঙ্গী।
৩০ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের সদর থেকে অমিতোষ হালদার নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ভোর ৫টায় জেলার সদর থানার পাটিকেলবাড়ি ইউনিয়ন থেকে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ব্যাপারে কয়েকপাতা সুইসাইড নোটও পাওয়া গেছে। মারা যাওয়া অমিতোষ হালদার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষেও শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী এক মাস আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে যান। পারিবারিক কলহের কারণে বাড়িতে এসে চুপচাপ থাকতেন। বুধবার রাতে বাবা-মাকে ঘরের বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে তিনি গাছের ডালের সঙ্গে দড়ি দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ থেকে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী চন্দন পার্সি আত্মহত্যা করেছেন। বেকারত্ব ও প্রেমঘটিত কারণে এ শিক্ষার্থী মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে এ শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা জানান।
২৮ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে আহত হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকবর হোসেন। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। আকবর হোসেন খানের বাড়ি মৌলভীবাজার সদরে। এ শিক্ষার্থীও প্রেমঘটিত কারণে মানসিক অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। তবে এটি আত্মহত্যা না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড সেটি জানা যায়নি। এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছেন।
গত ২৩ আগস্ট রাজধানীর উত্তরায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেসবাহ আত্মহত্যা করেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি মানসিক বিষণ্নতায় ভুগছিলেন বলে জানান তার সহপাঠীরা।
এসব বিষয়ে জগন্নাথ বিশবিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা আরও বেড়েছে। এদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে মানসিক কাউন্সিলিং প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনের উচিত জরুরি ভিত্তিতে দুই জন সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া। তারা মানসিক অবসাদগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সমস্যা শুনবেন ও পরামর্শ দেবেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মানসিক অবসাদগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া প্রত্যেক বিভাগে শিক্ষার্থীদের সমস্যা শোনার জন্য একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক থাকবেন।
সার্বিক বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, মেডিক্যাল সেন্টারে দুইজন সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সমস্যা শোনার জন্য প্রত্যেক বিভাগে দুইজন ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হবে। আগামী সিন্ডিকেটে এ পদগুলো সৃষ্টি করে নিয়োগ দেওয়া হবে। যাতে শিক্ষার্থী মানসিক সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২১
আরআইএস