ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

দেড়শ ঘণ্টায় অনশন না ভাঙায় সতীর্থদের কান্না

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
দেড়শ ঘণ্টায় অনশন না ভাঙায় সতীর্থদের কান্না ছবি-মাহমুদ হোসেন

সিলেট: এ কেমন ক্ষোভ বা মনস্তাপ? যে ক্ষোভ দাবানল ছড়ালো শিক্ষার্থীদের মনে। কেবল ভিসির পদত্যাগে জীবন দিতে চায় শিক্ষার্থীরা।


 
ভিসিবিরোধী ক্ষোভ মনে পুষে রাখা অনশনকারী শিক্ষার্থীরা রাত ১২টায় ১৫০ ঘণ্টা পার করলেন। দেড়শ ঘণ্টা হলো তারা দানা-পানি মুখে নেননি। এতো বেশি ক্ষোভ, এতো বেশি আত্মসম্মানে আঘাতে অহিংস এই আন্দোলন এবার হয়ে ওঠেছে প্রাণঘাতি। ক্ষোভে জীবন বিসর্জন দিতে পিছপা হচ্ছেন না অনশনরত শিক্ষার্থীরা।
 
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) পেছন থেকে সরে গেল ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের মেডিক্যাল টিম। যে কারণে অনশনে থাকা ২৮ শিক্ষার্থী পড়েছেন শঙ্কায়। ফলে এদিন বিকেল সোয়া ৫টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সতীর্থদের অনশন ভাঙাতে অনুরোধ করবেন বলে জানান। তাতে ক্ষীণ আশার আলো জেগেছিল, অনশন ভাঙছেন শিক্ষার্থীরা!
 
অনুনয় বিনয় করিয়ে সতীর্থদের অনশন ভাঙাতে যান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সন্ধ্যার পর অনশনকারী শিক্ষার্থীরা সাফ জানিয়ে দেন, ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা দানা-পানি মুখে নেবেন না, তাতে মৃত্যু হয় হোক। ফলে অনশনকারীদের জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সতীর্থ শিক্ষার্থীরা।  
 
তাদের মধ্যে এমন জেদ দেখা দিয়েছে যে, মৃত্যুকেও আলিঙ্গন করতে দ্বিধাবোধ করছেন না।
 
এ নিয়ে রাত ৯টার দিকে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, ‘আমরা চেয়েছিলাম, অনশন ভাঙিয়ে ভিসির পদত্যাগের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। কিন্তু অনশনকারীরা তাদের অবস্থান থেকে অনড় রয়েছেন। মৃত্যু হোক, তাও তারা অনশন ভাঙবেন না বলে জানিয়ে দেন।  
 
হাসপাতালের চিকিৎসকের বরাত দিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, অনশনকারীদের ২০ জন হাসপাতালে রয়েছেন। তাদের ৬ শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর। এর মধ্যে এক শিক্ষার্থীর হাতে এতোবার ক্যানোলা লাগানো হয়েছে যে, চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার হাতে আর স্যালাইন দেওয়ার জন্য সুঁই ফুঁটানোর জায়গা নেই। অনশন ভাঙাতে না পারলে খারাপ কিছু ঘটে যেতে পারে।
 
আন্দোলনকারীরা বলেন, আমাদের জীবনের যখন মূল্য নেই। তাই নীতির জায়গায় অনড়। যেই ক্যাম্পাসে কবিতা আবৃতি করতাম, ওখানে কারো বুকে ওভাবে প্লিন্টার্স দেখিনি। এবার দেখতে হলো। যতক্ষণ ভিসি পদত্যাগ করবেন না, ততক্ষণ অনশন ভাঙবো না।
 
এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে গোলচত্বরে আন্দোলন চালিয়ে যেতে শপথ গ্রহণ করেন। শপথে বলা হয়-‘স্বৈরাচারী ভিসি ফরিদ উদ্দিনের পদত্যাগের আগ পর্যন্ত আমরা আমাদের দাবি আদায়ের লড়াই চালিয়ে যাবো। অনশনরত ভাইবোনদের এতোদিনের অকুতোভয় সংগ্রামের অনুপ্রেরণা বুকে ধারণ করে আরও দ্বিগুণ শক্তি ও তেজে আমরা আমাদের সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। তাদের এই দুর্বিসহ যন্ত্রণা আমরা বৃথা যেতে দেব না। দিন হোক, রাত হোক, আমরা আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে যাবো না। আমরা আমাদের একদফা দাবি আদায় করে ঘরে ফিরে যাবো। ’  
 
এদিকে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা চালাবেন বলে জানিয়েছে ক্যাম্পাস সূত্র।
 
সূত্র আরও জানায়, ড. জাফর ইকবালের অনুরোধে অনশনরত শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙতে পারেন।    
 
ভিসির পদত্যাগ দাবিতে গত ১৯ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় অনশনে যান ২৪ শিক্ষার্থী। এ পর্যন্ত নতুন ৫ জনসহ ২৮ শিক্ষার্থী অনশন করছেন। এর মধ্যে হাসপাতালে আছেন ২০ জন। এছাড়া অনশনস্থলে ৮ জন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভলেন্টিয়ারের দায়িত্বে থাকা সবুর খান।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২২
এনইউ/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।