শাবিপ্রবি (সিলেট): একদফা দাবিতে উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস এখন সুনসান। গত ১৩ জানুয়ারি থেকে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু করেন একটি হলের শিক্ষার্থীরা।
অনশন ভাঙার পর শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার ও ইয়াসমিন হক ম্যামের অনুরোধে অনশন থেকে সরে এসেছি। অনশন ভাঙলেও একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা কোন সহিংস আন্দোলন করতে চাই না। তাই আন্দোলনের ভাষা পরিবর্তন করা হয়েছে, তবে উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে ২৬ জানুয়ারি অনশন ভাঙার পর থেকেই ক্যাম্পাসের চিত্র পাল্টাতে থাকে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কমে ফাঁকা হতে থাকে ক্যাম্পাস। তবে রাতে প্রতিবাদী কনসার্টে কিছু শিক্ষার্থীর সমাগমের দেখা মিললেও বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দিনে তেমন উপস্থিতি চোখে পড়েনি।
শিক্ষার্থীদেন অনশনর ভাঙার পর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আগের কোলাহল কমে, অনশনকারীদের বিছানাপত্র গুছিয়ে নিয়ে যান স্বেচ্ছাসেবীরা। এরপর ভিসির বাসভবনের সামনের ফটক পুরোপুরি ফাঁকা হয়ে যায়। সকাল থেকে ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী, আর সাংবাদিক ছাড়া তেমন কাউকে দেখা যায়নি। বর্তমানে সুনসান নীরবতা ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসে। এছাড়া সন্ধ্যায় রো পেইন্টিং, আর রাতে প্রতিবাদী কনসার্ট ছাড়া তেমন কার্যক্রম চোখে পড়ছে না।
আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা সবাই ক্লান্ত, তাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক, একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবনও খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
এর আগে অনশন ভাঙাতে গিয়ে জাফর ইকবাল বলেছেন, সরকার তাকে যে কথা দিয়েছে, আশা করি সেই কথাগুলো রাখবে। কিন্তু সরকার কী কথা দিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। অনেকেই মনে করেন, সরকার আন্দোলনের মুখে উপাচার্যকে সরাবে না। সরাতে হলে পরে কোনো একসময় সরাবে। আর সে ক্ষেত্রে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন পদত্যাগ করতে পারেন।
জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি সংকল্প করে এসেছি তোমাদের অনশন ভাঙিয়ে তার পর সিলেট ছাড়ব। আমি চাই তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাও, তবে অনশন ভেঙে আন্দোলন কর। আন্দোলন আর অনশন ভিন্ন জিনিস। এই কয়দিনে তোমরা দেশের সব মহলকে দেখিয়ে দিয়েছ; তোমাদের বার্তা সবার কাছে পৌঁছাতে পেরেছ, আমি নিজেও তোমাদের কথা পৌঁছে দেব। ’
এ সময় এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এতদিন আমাদের কথা শোনার কেউ ছিল না। আমরা আপনাকে বিশ্বাস করি। আপনার আশ্বাসে আমরা অনশন ভাঙছি। তবে আমাদের কথা দিয়ে আপনারা তা ভঙ্গ করবেন না! জবাবে জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার সঙ্গে সরকারের উচ্চচমহলের কথা হয়েছে। তারা যদি আমাকে দেওয়া কথাগুলো না রাখে, তবে বুঝব, শুধু আমি কিংবা শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই নয়; পুরো বাংলাদেশের প্রগতিশীল মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।
এদিকে কর্মসূচিতে আহতদের চিকিৎসাভার বহন করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সঙ্গে আলোচনার জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
শুক্রবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল বাসার রাজ। তিনি বলেন, পুলিশী হামলার ঘটনায় আহত এবং অনশনকালে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সব খরচ পরিশোধ করায় আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সৌরভের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রী আমাদের মূল দাবিসহ অনান্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সব শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের দাবি ও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে শাবিপ্রবিতে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী। আমরা তার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা এবং দাবি নিয়ে আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। শিক্ষামন্ত্রীকে ক্যাম্পাসে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ২৮ জানুয়ারি, ২০২২
এমএমজেড