ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

স্থায়ী চাকরির দাবিতে ইবির প্রধান ফটকে ছাত্রলীগের তালা!

ইবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২২
স্থায়ী চাকরির দাবিতে ইবির প্রধান ফটকে ছাত্রলীগের তালা!

ইবি: স্থায়ী চাকরির দাবিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) প্রধান ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন করেছেন অস্থায়ী কর্মজীবী পরিষদের নেতাকর্মীরা। পরিষদের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় তালা দিয়ে দুই ঘণ্টা ফটক আটকে রাখেন। এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় তারা উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে উপাচার্যের পিএসকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা দেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফটকে তালা দেওয়ায় বিকেল সাড়ে ৩টার নির্ধারিত বাস ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে পারেনি। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করে তালা খুলে দেয় তারা।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তর ও বিভাগে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে ১০৬ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের বেশিরভাগই সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী। এ সব কর্মচারীরা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি করে আসছেন।  

পরে তারা 'অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদ' গঠন করে এই ব্যানারে চাকরির দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার দুপুরে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।

জানা যায়, গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫৪তম সিন্ডিকেট সভায় ২০১৮ সালে অনুমোদন হলেও পরবর্তীতে নিয়োগ বাতিল হওয়া এক শিক্ষককে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলে তার নিয়োগের প্রতিবাদ জানাতে ক্যাম্পাসে জড়ো হন কর্মচারীরা। তারা সিন্ডিকেটে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ২০১৮ সালের ওই শিক্ষকের নিয়োগ দেওয়ায় ক্ষোভ জানান ও তাদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানান।

প্রথমে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আতাউর রহমানের কার্যালয়ে গিয়ে তাকে দাপ্তরিক কাজ বন্ধ করতে চাপ দেন। পরে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান নিয়ে হট্টগোল শুরু করেন ও বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।  

উপাচার্য কার্যালয়ে না থাকায় তারা উপাচার্যের ওই অফিসে কর্মরতদের বের করে দেয়। এসময় পিএস আইয়ুব আলীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুই ঘণ্টা পর সহকারী প্রক্টররা এসে উপাচার্যের পিএসকে কার্যালয় থেকে উদ্ধার করেন।  

এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় তারা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা দেন। এসময় চাকরির দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের বাসগুলো আটকে পড়ায় তারা চরম দুর্ভোগে পড়েন। পরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বর্তমান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাগ-বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।

ভোগান্তির বিষয়ে একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ দুই ঘণ্টা ধরে আমাদের বাসগুলো আটকে রাখা হয়। প্রায়শই আমরা এরকম ঘটনার সম্মুখীন হই। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে এসব দেখতে হয়। এর স্থায়ী প্রতিকার চাই আমরা।

আন্দোলনের দীর্ঘ সময় পর ঘটনাস্থলে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে প্রক্টরের আশ্বাসে তারা প্রধান ফটক থেকে সরে যায়।

অস্থায়ী চাকরিজীবী পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান টিটো বলেন, 'আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দপ্তরে কাজ করে আসছি। কিন্তু আমাদের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমাদের দাবি বিভিন্ন অফিসে যারা দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করছে তাদের স্থায়ীভাবে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। '

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘটনাগুলো দুঃখজনক। আগামী সোমবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে। ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রক্টরিয়াল বডি শুরু থেকেই সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়েছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, ‘এরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ প্রাপ্ত কেউ না। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে তাদের দৈনিক মজুরিতে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়েছিলো। এখন তার আর দরকার নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।