ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জবির প্রশাসনিক পদে কী মধু!

মহিউদ্দিন রিফাত, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
জবির প্রশাসনিক পদে কী মধু!

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দপ্তর চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ প্রশাসক দিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে দপ্তরগুলোর পরিচালকের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য এসে নতুন কাউকে নিয়োগ দেননি।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের ছকেই চলছে এসব দপ্তর। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে নতুন পরিচালক নিয়োগের দাবি জানিয়ে এলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

উপরোন্তু বর্তমানে চলতি দায়িত্বে থাকা পরিচালকরা পুনরায় পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পেতে বিভিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন লবিং। কেউ কেউ আবার পদ ধরে রাখতে উপাচার্যের পছন্দের লোক হতেও চালিয়ে যাচ্ছেন নানা চেষ্টা।

দায়িত্বে থাকা পরিচালকদের এসব কর্মকাণ্ড দেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রশ্ন তুলছেন। কেউ কেউ বলছেন শিক্ষকদের পড়াশোনা এবং গবেষণায় মনোযোগ থাকবে, তারা কেন প্রশাসনিক পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠবেন? এসব শিক্ষক শিক্ষকতা ছেড়ে কর্মকর্তা হতে চান কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। প্রশাসনিক এসব পদে কী মধু আছে, বলে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান উপাচার্যের যোগদানের ৮ মাস হতে চলেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ চার দপ্তর প্রধানের মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে কাউকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে যেকোনো সময় রদবদল হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মো. নাসির উদ্দিনের নিযুক্তির মেয়াদ গত ২২ জুন ২০২১-এ শেষ হয়েছে। এরপর নতুন পরিচালক নিযুক্ত না করে আবার সহযোগী অধ্যাপক কাজী মো. নাসির উদ্দীনকে ২০২১ সালের ২৩ জুলাই পুনরায় অনির্দিষ্টকালের জন্য অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তিনি পরবর্তী পরিচালক নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। তার বিরুদ্ধে অতীতে অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ লোপাটের অভিযোগ রয়েছে, যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

তবে এসব অভিযোগ থাকলেও কাজী মো. নাসির উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারের আস্থাভাজন বলে সবকিছু থেকে পার পেয়ে যাচ্ছেন। এ কারণে তিনি মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে দায়িত্বে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় অর্থ, কোনো খাতে কত টাকা বরাদ্দ দিতে হবে সেটাও তার পরামর্শে করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর দপ্তরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তফা কামালের নিযুক্তির মেয়াদ ২০২১ সালের ২৪ জুলাই শেষ হয়েছে। এরপর তাকে পুনরায় ২০২১ সালের ২৫ জুলাই পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। এই পদে আসতে অনেকেই উপাচার্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রাখছেন। তবে বর্তমানে দায়িত্বে থাকা প্রক্টরও তার পদ ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের প্রশাসক হিসেবে গত ২০ জুলাই ২০১৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। ২০ জুলাই ২০১৯ সালে তার দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হলে নতুন কাউকে নিয়োগ না দিয়ে সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ২৫ আগস্ট ২০১৯ থেকে পুনরায় পরিবহন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়।

১৪ মার্চ, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালক বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হলে ১৫ মার্চ ওই পদে দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলামকে পরিচালক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী দপ্তর প্রধান হিসেবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে একজন কর্মকর্তা দিয়ে দপ্তরের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি দপ্তরে কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য্য আইটি দপ্তরের শুরু থেকেই পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। শুরু থেকে একটানা আইটি দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হলেও, পুনরায় গত ২ মার্চ ২০২০ থেকে এই শিক্ষককে আইটি দপ্তরের পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যার মেয়াদ চলতি বছরের আগামী ৩ মার্চ শেষ হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, কোনো রকমের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া উচিত না। মেয়াদ শেষ হলেই নতুন কাউকে পূর্ণ মেয়াদে নিয়োগ দিয়ে দিতে হবে। এর ফলে ভেতরে ভেতরে অনেকের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। আবার অনেকে এসব অতিরিক্ত দায়িত্ব দেখে শিখছেন পরে তারাও কোনো দায়িত্বে গেলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পাওয়ার জন্য বসে থাকবেন। তাই এগুলো এখনই বন্ধ করতে হবে।

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. ইমদাদুল হক বলেন, এই পদগুলোর দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ায় অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যে কোনো সময় রদবদল হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২২
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।