দিনাজপুর: করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়েছে।
অনেক আশা আর কৌতূহল নিয়ে নতুন শ্রেণিতে ক্লাস করতে গিয়েও ফিরে আসতে হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণাকে। ইউনিফর্ম পরে না যাওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাকে স্কুল থেকে বের করে দেন।
মঙ্গলবার দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
শিক্ষার্থী সুমাইয়া সিনহা স্বর্ণা পৌর শহরের রামচন্দ্রপুর গ্রামের সুপারি ব্যবসায়ী মো. শাহিনুর ইসলামের মেয়ে। সে থ্যালাসেমিয়া রোগী বলে জানিয়েছে তার পরিবার।
জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে সাধারণ পোশাকে ফুলবাড়ী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে যায় সুমাইয়া। এসময় ইউনিফর্ম না পরে আসার কারণে সুমাইয়াসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ক্লাস রুম থেকে ডেকে এনে সবার সামনে অপমান করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসেম আলী। এসময় শিক্ষার্থীরা অনেক অনুরোধ করলেও বিদ্যালয়ে আর ঢুকতে দেননি তিনি।
শিক্ষার্থী সুমাইয়া জানায়, কয়েকদিন আগে ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাওয়ার নির্দেশনা পেয়ে টেইলার্সে ইউনিফর্ম বানাতে দেন তার বাবা। কিন্তু টেইলর এখনো ইউনিফর্ম তৈরি করতে না পারায় মঙ্গলবার সকালে সে সাধারণ পোশাকেই স্কুলে চলে যায়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তাকেসহ কয়েকজনকে ক্লাস রুম থেকে ডেকে নিয়ে সবার সামনে অপমান করে স্কুল থেকে বের করে দেন।
ওই শিক্ষার্থী বাবা মো. শাহিনুর ইসলাম বলেন, সকালে নিজেই অসুস্থ মেয়েকে স্কুলে রেখে সহকারী শিক্ষকদের বলেছি যে আমার মেয়ের ইউনিফর্ম তৈরি করা হয়েছে। দর্জির কাছে রয়েছে। কাল থেকে ইউনিফর্ম পরে স্কুলে আসবে আমার মেয়ে। এর কিছুক্ষণ পরে শুনি সুমাইয়াকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ায় প্রতিমাসে তাকে তিন থেকে চার ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার টাকা খরচ হয়। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ সম্বল বাড়িটিও বিক্রি করতে হয়েছে। স্কুল থেকে বের করে না দিয়ে আমাকে জানালে আমি তাকে বাড়িতে নিয়ে আসতাম। এভাবে একটা অসুস্থ বাচ্চাকে বের করে দেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাসেম আলী বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী সব শিক্ষার্থীকে ইউনিফর্ম পরে বিদ্যালয়ে আসতে বারবার বলা হলেও অনেকে পরে আসেনি। তাই তাদের স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শমসের আলী মণ্ডল জানান, শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম বা স্কুল ড্রেস পরার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীদের তাগিদ দেওয়ার জন্য। তবে এ রকম কোনো কথা বলা হয়নি। বিষয়টি অযাচিত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি কিছুক্ষণ আগে ঘটনাটি শুনেছি। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলব।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫১ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০২২
এসআই