ইবি (কুষ্টিয়া): ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ক্রিকেট মাঠে বঙ্গবন্ধু টুর্নামেন্টের খেলা চলাকালীন হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। খেলা শেষে সন্ধ্যায় বায়োটেকনোলজি বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে ল' অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কয়েক শিক্ষার্থী মারধর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সোমবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এ মারধরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিচার চেয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। পরবর্তীতে রাত ১০টার দিকে প্রশাসনের আশ্বাসে তারা আন্দোলন স্থগিত করে।
জানা যায়, দুপুরের দিকে বঙ্গবন্ধু ক্রিকেট টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল খেলা শুরু হয়। এতে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও ল' অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্টে বিভাগ অংশগ্রহণ করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খেলা চলাকালীন বিকেল ৩টার দিকে আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ ব্যাটিং করার সময় বায়োটেকনোলজি বিভাগের খেলোয়াড়েরা আউটের আবেদন করেন। এতে ব্যাটিংয়ে থাকা ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের খেলোয়াড় বিজন ক্ষুব্ধ হয়ে উইকেট রক্ষককে কটাক্ষ করে গালিগালাজ করেন।
একপর্যায়ে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করলে দুই বিভাগের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এতে দুই পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।
আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগ দাবি করে উইকেট রক্ষক পেছন থেকে ব্যাটারদের কটাক্ষ করে। ফলে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বিপক্ষ দল আমাদের আক্রমণ করে। তাই আমরাও প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি।
অন্যদিকে বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ দাবি করেন ব্যাটাররা আমাদের খেলোয়াড়দের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করে। এতে তাদের সঙ্গে বাগ-বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। হঠাৎ তারা ব্যাট, স্ট্যাম্প নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের কয়েকজন খেলোয়াড় আহত হন।
পরে সেখানে প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, সহকারী প্রক্টর ড. আমজাদ হোসেন, সাজ্জাদুর রহমান টিটু ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এসময় তারা দুই বিভাগের শিক্ষক, খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা তাৎক্ষণিক সমাধান করে শারীরিক শিক্ষা বিভাগকে পুনরায় খেলা চালানোর নির্দেশ দেন। দ্বিতীয় দফায় খেলা শুরু হলে বিকেল ৬টার দিকে অমীমাংসিত অবস্থায় খেলা শেষ হয়। ২৯ মার্চ খেলার বাকি অংশ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
খেলা শেষ করে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাঠ ছেড়ে উঠে যায়। ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট খেলোয়াড়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল হল ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের খেলোয়াড়েরা বঙ্গবন্ধু হলের পুকুর পাড়ে বিশ্রাম নেন।
সাড়ে ৬টার দিকে মামুন বঙ্গবন্ধু হল পুকুর পাড়ের সামনে যান। সেখানে গিয়ে বায়োটেকনোলজি বিভাগের খেলোয়াড় শিহাবকে ডাকেন হাতাহাতির বিষয়টি সমাধানের জন্য। এসময় মামুন শিহাবকে ডেকে নিয়ে পুকুর পাড়ের সিঁড়ি বেয়ে একটু নিচে যান। নিচে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শিহাবকে মারধর করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।
পরে পুকুর পাড়ে বসে থাকা বায়োটেকনোলজি বিভাগের খেলোয়াড়রা তাকে উদ্ধার করে মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী শিহাব জানান, সোহাগ ভাই মামুন এবং আমাকে কোলাকুলি করে সমাঝোতা করিয়ে দেয়। এ সময় মামুন আমার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলার জন্য বললে সোহাগ ভাই সবার সামনে বলতে বলেন। পরে আলাদাভাবে পুকুরের নিচে কথা বলার জন্য গেলে আমাকে মেরে পালিয়ে যায়। এরপর আমাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হয়।
এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান নেয় বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা জড়িতদের শাস্তির দাবিতে লিখিত অভিযোগ দেন।
পরে ৯টার দিকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান তার নিজ কার্যালয়ে বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিটিংয়ে বসেন। মিটিংয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভুঁইয়াসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে প্রশাসন আগামীকাল ১১টায় প্রক্টরিয়াল বডিকে বসার নির্দেশ দেন। প্রশাসনের এ নির্দেশেনায় আন্দোলন স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমরা প্রক্টরিয়াল বডিকে নির্দেশ দিয়েছি। তারা আগামীকাল ১১টায় বসবেন। দোষীদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা হবে। '
বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০২২
আরএ