পটুয়াখালী: বয়ঃসন্ধিকাল ছেলে ও মেয়ে উভয়ের শরীর ও মনে নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। এ সময়ে ছেলে-মেয়েরা যেমন দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে, তেমনি তাদের চিন্তা-চেতনায় দেখা দেয় পরিবর্তন।
এদিকে, ঘরের বাইরে কিশোরদের জন্য ব্যক্তিগত হাইজিন ব্যবস্থাপনার সুযোগ না থাকায় মাসে কমপক্ষে ৩-৪দিন ক্লাসে অনুপস্থিত ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। তবে পটুয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চলের রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়ায় জলবায়ু সহিষ্ণু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পে আওতায় স্কুলে স্কুলে স্থাপন করা হয়েছে হাইজিন কর্নার। এতে ব্যক্তিগত পয়ঃনিস্কাশন ও সচেতনতায় এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
অনেকেই নিজ শিক্ষক, পরিবার ও সেবা দাতা প্রতিষ্ঠানে নিজের গোপনীয়তা জানাতে লজ্জাবোধ করছেন। আবার অনেকেই এ পরিবর্তন ও ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত নয়। কিছু সংখ্যক জানলেও কারও সঙ্গে আলোচনা করতে পারছেন না।
এ সমস্যা সমাধানে বরিশাল বিভাগী কমিশনার অফিসের উদ্যোগে ইউনিসেফ বাংলাদেশের অর্থায়নে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে জলবায়ু সহিষ্ণু স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় দুই উপজেলার ৪৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও মাসিক ব্যবস্থাপনা কর্নার।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা কর্নারে বিনামূল্যে স্যানিটারি প্যাড, প্রয়োজনীয় ওষুধ, প্রাথমিক চিকিৎসাসামগ্রী পাচ্ছি। এছাড়াও সচেতনতামূলক ব্যানার ফেস্টুনের তথ্য তাদের অজানা বিষয়ে জানায় এখন অনেকটা স্বাভাবিকভাবে সব পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারছে। নিজ বিদ্যালয়ে হাতের কাছে সেবা পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে কিশোরীরা।
মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গায়ত্রী রাণী বলেন, প্রকল্পের আওতায় আমাদের একজন নারী শিক্ষক ও কিশোরী শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন ওদের সমস্যাগুলো শুনছি, খোলামেলা আলোচনা করছি। এতে করে কিশোরীদের ব্যক্তিগত পয়ঃনিস্কাশন ও সচেতনতায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ক্লাসে অনুপস্থিতির সংখ্যাও কমেছে।
বরিশাল ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রধান তৌফিক আহমেদ বলেন, এই প্রকল্প জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে মানব স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় সচেতনতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, দুই উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও প্রতিটি ইউনিয়নে ২০ সদস্যের ইয়ুথ ক্লাবের সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কমিউনিটি ক্লিনিকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। যারা নিজেদের কমিউনিটিতে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছেন।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল-আহসান বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়ন ও ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর পরিবর্তন এনেছে এই প্রকল্প। সরকারের নারী ক্ষমতায়ণের উদ্যেগের অংশ হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত ও নির্বিঘ্ন করতে এই প্রকল্পের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও ব্যক্তিগত হাইজিন ব্যবস্থাপনা কর্নার ভূমিকা রাখবে।
বরিশাল বিভাগের সব জেলায় দীর্ঘমেয়াদি সময়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে, সে বিষয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সব মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা শিক্ষা, প্রচার ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সুস্থ ও সবল ভবিষ্যত জনগোষ্ঠীকে গড়ে তুলা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২২
এসআরএস