ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

শিক্ষা

ইবিতে হাতের নাগালে মাদক, আসক্ত নবীনরাও!

ইবি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
ইবিতে হাতের নাগালে মাদক, আসক্ত নবীনরাও! ফাইল ছবি

ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সহজলভ্যতা ও সরবরাহ বাড়ার ফলে মাদকাসক্ত বাড়ছে। ক্যাম্পাসে আসার পরপরই মাদকে জড়াচ্ছেন নবীন শিক্ষার্থীরাও।

এ ক্ষেত্রে প্রসাশনের নিরব ভূমিকাকে দায়ী করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।  

অভিযোগ রয়েছে, গণরুমে উঠিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের হাতে মাদক ধরিয়ে দেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। যাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী স্থানীয়রা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় কিছু কর্মচারী ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহ করে থাকে। ভ্যানচালক, ঘাসকাটা শ্রমিক, দর্শনার্থীসহ বিভিন্ন ছদ্মবেশে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে তারা।  

এছাড়াও কখনো ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক, লালন শাহ হল পকেট গেট, বঙ্গবন্ধু হল পকেটগেট, লেকসহ বিভিন্নভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। কখনো এসব গেটের পাশ্ববর্তী চায়ের দোকানে এজেন্টরা ছদ্মবেশে অবস্থান করে।  

মাদকাসক্ত এক শিক্ষার্থী জানান, পরিচিত কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে এজেন্টদের মোবাইল নম্বর রয়েছে। এজেন্টরা তাদের কাছে মাদক সরবরাহ করে। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছে তারা সহজে মাদক বিক্রি করে না। মাঝেমধ্যে এজেন্টরাও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মাদকের আসরে বসে।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীও মাদকের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। মাদক ব্যবাসার সঙ্গেও জড়িয়েছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী ও কর্মচারী। গত চার বছরে মাদকসহ অন্তত ৩ জন কর্মচারী আটক হয়েছেন।  

সম্প্রতি গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এলাকায় আনোয়ার জোয়াদ্দার নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে ১৫০ পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়। এসব ইয়াবা তিনি ক্যাম্পাসে সরবরাহের উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে মাদকের আসর বসলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। রাতে হলের কক্ষে, ছাদে, বঙ্গবন্ধু হল পুকুড় পাড়, ক্রিকেট মাঠ, স্মৃতিসৌধ, টিএসসিসি, মফিজ লেকসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে বসে মাদকের আসর। ছাত্রহলগুলোর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হল ও সাদ্দাম হোসেন হলে মাদকের আসর বেশি বসে।  

ক্যাম্পাসে আসার পরপরই গণরুমে উঠে নবীন শিক্ষার্থীরাও মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের এ ভয়াবহ নেশা ধরিয়ে দেন। মাদকাসক্তির কারণে পড়াশোনা থেকে দূরে থাকায় একাধিকবার ফেল করে বিভাগ থেকে বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে।

সূত্র জানিয়েছে, হাতের নাগালেই গাঁজা, মদ, ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হিরোইন প্যাথেডিনসহ বিভিন্ন ভয়বহ মাদক মিলছে। মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীরা শিক্ষক ও সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ, জুনিয়রদের র‍্যাগিং, শাসানো, হলের ডায়নিং বা দোকানগুলোতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ফাও খাওয়া, মারামারি, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপকর্মেও জড়িয়ে পড়ছেন।  

এছাড়া সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য মাদকাসক্ত জুনিয়রদের ব্যবহার করছেন। অতিরিক্ত মাদকসেবনের ফলে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী।

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, শুরুর দিকে বিভাগের এক জুনিয়রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল। করোনার ছুটির পরে দেখি মাদকাসক্ত হয়ে প্রায় মানসিক ভারসাম্যহীন। অধিকাংশ সময়ই নেশায় বুদ হয়ে থাকে। তার বিভাগেরই এক সিনিয়দের হাত ধরে ছেলেটা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মেধাবী মুখগুলো এভাবেই ধ্বংসের পথে।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেসব শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে অভিযোগ সে অভিযোগের ভিত্তিতে প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করে যাচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরূদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে মাদক ঢোকার বিষয় নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রভোস্টদের মাধ্যমে আবাসিক হলগুলোতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
 

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২২
এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।