ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

জবিতে নিলামের মালপত্র বিক্রির টাকা আত্মসাৎ

মহিউদ্দিন রিফাত, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৫ ঘণ্টা, জুন ২, ২০২২
জবিতে নিলামের মালপত্র বিক্রির টাকা আত্মসাৎ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি): জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) নতুন ক্যাম্পাসের পুরাতন মালপত্র নিলামে বিক্রির এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ পরিচালক খন্দকার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৪ অক্টোবর মেসার্স রউফ এন্টারপ্রাইজের কাছে জবির নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনঃ ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কেরানীগঞ্জে পরিত্যক্ত মালপত্র ৮ লাখ ২১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

এর ১০ শতাংশ ভ্যাট ৮২ হাজার টাকাসহ মোট ৯ লাখ ৩ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রির আদেশ দেওয়া হয় এবং নিলামে বিক্রয়ের সমুদয় অর্থ ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামে পে-অর্ডারের মাধ্যমে দাখিল করতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রউফ এন্টারপ্রাইজ দুইটি রশিদে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা পে অর্ডারের মাধ্যমে পরিশোধ করে। ক্যাশ ভাউচারে পরিশোধকৃত ১ লাখ ৫ হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম দুটি রশিদের মাধ্যমে ২৬/৮/২০২১ তারিখ ৪০ হাজার টাকা এবং ৩১/৮/২০২১ তারিখে ৬৫ হাজার টাকা অর্থ দপ্তরের ক্যাশ শাখায় জমা দেন।

পরবর্তীতে জমাকৃত টাকা হতে নিলামে বিক্রির মোট টাকার ১০ শতাংশ ভ্যাট (৮২ হাজার টাকা) সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা বলে অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ পরিচালক খন্দকার হাবিবুর রহমান অর্থ দপ্তরের ক্যাশিয়ার আব্দুল গাফফারের কাছ থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরে দেখা গেছে ১০ শতাংশ ভ্যাটের টাকা পে অর্ডারের টাকা থেকে ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি চেকের (চেক নং ৮১২৬৯৩৮) মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খন্দকার হাবিবুর রহমানের নেওয়া টাকা ৯ মাস পার হয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দেননি তিনি এবং সে টাকা কোথায় আছে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা তা সে বলতে পারেন না বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কস দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রউফ এন্টারপ্রাইজ ১ লাখ ৫ হাজার টাকা জমা দেওয়ার পর আমি ওই টাকা অর্থ দপ্তরে জমা দেই।  

তারা জানান, এই টাকা থেকে ১০ শতাংশ ভ্যাট জমা দেওয়া হবে। কিন্তু এখন দেখতেছি ১০ শতাংশ ভ্যাট চেকের মাধ্যমে জমা দেওয়া হয়েছে। অর্থ দপ্তরে জমাকৃত টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাশিয়ার আব্দুল গাফফার বাংলানিউজকে জানান, টাকা জমা রাখার পর স্যার (খন্দকার হাবিবুর রহমান) বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে টাকা জমা হয়েছে কিনা বা টাকা জমা দেওয়ার কোন রশিদ আছে কিনা দেখতে চাইলে তিনি কোন রশিদ এই প্রতিবেদককে দেখাতে পারেননি।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ পরিচালক খন্দকার হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। পরে তথ্য-প্রমাণ দেখালে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

তিনি বলেন, ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে আমি টাকা নিয়েছি কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাগারে টাকা জমা হয়েছে কিনা আমি জানি না। রসিদও আমার কাছে নেই ফাইলও আমার কাছে নেই।

তিনি যেই টাকা ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে নিয়েছেন সেই টাকা এখন কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা কোথায় আছে আমি জানি না। আমি জেনে আপনাকে জানাতে পারবো। তার জন্য আমার সময় লাগবে। পরে আবার বলেন এটা ট্রেজারার স্যারের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। কিন্তু কী সমাধান করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেননি।

এ বিষয়ে জানতে অর্থ ও হিসাব দপ্তরের পরিচালক ড. কাজী মো. নাসির উদ্দীনের মোবাইল ফোনে বাংলানিউজের প্রতিবেদক কয়েকবার কল দিলেও তিনি ফোনকল রিসিভ করেননি। পরে আবারও ফোন দিলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ মোবাইলের নম্বরে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। অফিসে গিয়ে দেখা করতে বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসব আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম মো লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা চাই না কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক টাকারও ক্ষতি হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক কোনো অনিয়ম হবে এটা আমরা বরদাস্ত করবো না। কেউ যদি অনিয়ম করে সেটা আমরা প্রশাসনেকে অবহিত করবো। এটা যথাযথ তদন্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কেউ যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে ভিসি স্যারকে বলবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, জুন ০২, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।