ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসককে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২১ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২২
ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসককে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, (ঢাবি) : সাজ্জাদ হোসেন নামে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে।

সোমবার (৮ আগস্ট) রাত সাড়ে নয়টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঘটনাটি ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘটনার বিস্তারিত জানান ভুক্তভোগী।

রাত ৯.৩০ এর ঘটনা শিরোনামে সাজ্জাদ হোসেন তার ফেসবুকে পোস্টে লেখেন- ‘দুপুর পর্যন্ত সায়কিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে ডিউটি করেছি। বিকালে ঘুম দিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় কলেজের রিডিং রুমে পড়তে আসছি। ৯টার দিকে ভাবলাম একটু ঘুরে আসি। শহীদ মিনারে গেলাম। মূল বেদির পশ্চিম পাশে মাটির ওপরের রেলিংয়ে বসে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম। কয়েকটা ছেলে এসে বললো, ভাই পরিচয় কি? বললাম আমি ঢাকা মেডিকেলের। কোন ইয়ারে পড়েন? আমি বললাম আমি ইন্টার্ন ডাক্তার হিসাবে আছি। এরপর আইডি কার্ড চাইল। বললাম সাথে ব্যাগ নাই। আইডি কার্ড তো সবসময় সবাই সাথে নিয়ে ঘুরি না। এরপর বললো- কেন নাই?

চিল্লাতে চিল্লাতে বললো আমার সাথে তো ঢাবির আইডি কার্ড আছে। আমি বললাম ভাই ক্যাম্পাসের পাশেই তো আসছি। আইডি কার্ড কি সবাই সাথে নিয়ে ঘুরে? এই প্রশ্ন করার সাথে সাথে থাপড়ানো শুরু করলো। ৩-৪ টা থাপ্পড়ের পর অবাক হয়ে বললাম- ভাই কি করলাম আমি। এই কথা বলার পরে শুরু হইল দ্বিতীয় দফায় মাইর। এরপর আরও ৪-৫ জন আসলো। আমার নাকি এটিচুড (আচরণ) প্রবলেম, হেন তেন।

এইটা (শহীদ মিনার এলাকা) ঢাবির ক্যাম্পাস, আমি এইখানে কি করি বলে যতক্ষণ পারলো মাইর চললো। আমার মুখে মাস্ক ছিল। টেনে ছিড়ে ফেললো। কানের নিচে মারার পরে মাথা ঘুরানো শুরু করলো। আমি বসে পড়লাম, এরপর মাথায় লাথি মারা হইল। আমার মাথায় স্যান্ডেলের বালি পর্যন্ত লেগে ছিল। আমি কেন এখনও যাই না এখান থেকে; এইটা বলে চিল্লাইতে চিল্লাইতে ইচ্ছামত মারা হইল। আল্লাহ সাক্ষী, এতকিছুর পরও আমি একটা সিঙ্গেল গালিগালাজও করি নাই। খালি বলছি আল্লাহ বিচার করবে।

রিকশা নিয়ে বকশীবাজার সিগনালের গেটে ফিরলাম। রুমমেটকে ফোন দিলাম। সে এসে রুমে নিয়ে গেল। এক কানে কম শুনতেসি এরপর থেকে, নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। মাড়িও কেটে গেছে দাঁতের। গালের পাশে ফুলে আছে। চোখ ডান পাশেরটা লাল হয়ে আছে। ইমার্জেন্সিতে গেলাম। পুলিশ কেস সিলসহ ইনজুরি নোট লিখল। ইএনতে রেফার করলো। নাক দেখে বললো নাকের সেপ্টাম ইনজুরড হয়েছে। কান দেখে বলছে কানের পর্দায় ব্লিডিং স্পট আছে, হিয়ারিং লস আছে কিনা বুঝতে পরশু অডিওগ্রাম করতে হবে।

ইন্টার্নশিপে জয়েন করার পর থেকে ঢাবির-বুয়েটের অনেক স্টুডেন্টকেই হাসপাতালে আসতে দেখসি। যতটুকু হেল্প করার চেষ্টা করসি। স্যারদের কাছেও রোগীর কোনো দরকারে গেলে বলছি স্যার রোগী ঢাবির স্টুডেন্ট। পাশের ক্যাম্পাস, নিজেদের লোক ভেবেই এইটা করতাম। আজকে সবকিছুর প্রতিদান পাইলাম। পুরা জীবদ্দশায় কারো সাথে মারামারি করসি বলে মনে পরে না।

আমি হলে আছি আজকে ৬ বছর ধরে। যারা চিনেন তারা জানেন কতটুকু নম্রতার সাথে চলতে চেষ্টা করি। এরপরেও রক্ষা পাই নাই এমন অভিজ্ঞতা থেকে। যেই শহীদ মিনার প্রথম বানানো হইসিল ঢামেকের হলে, ঢামেকের স্টুডেন্টদের দ্বারা সেই শহীদ মিনারে ঢামেকের পরিচয় দেওয়ার পরেও এইভাবে মাইর খাওয়া লাগল! আমি কোনোদিন শহীদ মিনারকে আমার ক্যাম্পাসের বাইরের কিছু ভাবি নাই। এমনকি ঢামেকের আউটডোর গেটের নামও শহীদ মিনার গেট। কি চমৎকার দেশে বাস করি এইটাই ভাবতেছি। যখন তখন যে যারে পারতেছে এতগুলা মানুষের সামনে মারতেসে। মানুষও মজা দেখতেসে। একটা সিঙ্গেল মানুষও প্রতিবাদ করে নাই। ’

এ ঘটনার বিচার দাবি করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ। এতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ছাত্র কর্তৃক গত ৮ আগস্ট ২০২২ তারিখে, রাত ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বিনা উস্কানিতে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. মো. সাজ্জাদ হোসেনের ওপর উপর বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিসি টিভি ফুটেজের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে লাগাতার কর্মবিরতিসহ পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ, বাধ্য থাকবে।

এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, এ ঘটনায় আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। জড়িতদের চিহ্নিত করার জন্য কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে সহযোগিতা চাওয়া হলে আমরা সহযোগিতা করব।

বাংলাদেশ সময় : ১৭২০ ঘণ্টা, ৯ আগস্ট, ২০২২
এসকেবি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।