ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

স্থল পরিবেশে চাষ হবে সামুদ্রিক শৈবাল

হাসান নাঈম, শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
স্থল পরিবেশে চাষ হবে সামুদ্রিক শৈবাল

শাবিপ্রবি (সিলেট): দেশে প্রথমবারের মতো স্থল পরিবেশে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া।

সম্প্রতি কক্সবাজারের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত ‘সি উইড কালচার অ্যান্ড সি উইড প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ কোস্ট’ রিসার্চ প্রজেক্টের অংশ হিসেবে ‘সি উইড সিডলিং প্রোডাকশন থ্রো বায়োটেকনোলজি: হ্যাচারি টু ফিল্ড এসেসমেন্ট’ শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া ও অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম গবেষণা করেন।

দেশে প্রথমবারের মতো গবেষণা করে স্থল পরিবেশে সামুদ্রিক শৈবাল চাষের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন তারা।

জানা যায়, এ গবেষণায় ১১টি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল- উলভা লেক্টোকা, উলভা ইন্টেস্টাইনালিস, হাইড্রোক্লেথ্রাস ক্লেথ্রাটাস, সারগেসাম অর্নোডিয়েনাম, কলারপা রেসিমোসা, এন্টেরোমর্ফা ক্লেথ্রাটা, হিপ্নিয়া ভেলেন্টেই, গ্রেসিলারিয়া ভেরোকোসা, গ্রেসিলারিয়া কর্টিকাটা, পাদিনা বরিয়ানা ও কল্পোমেনিয়া সাইনোসার ইনভিট্রো প্রক্রিয়ায় চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে চাষ পদ্ধতির উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করা হয়। প্রকল্পের পর্যবেক্ষকদের নেতৃত্বে ২টি ভিন্ন পরিবেশে ২টি ল্যাবের মাধ্যমে গবেষণা পরিচালনা করা হয়।  

এতে সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করে কক্সবাজারে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র এবং কৃত্রিমভাবে প্রস্তুত সামুদ্রিক পানি ব্যবহার করে এই গবেষণার কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

গবেষণার বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফারুক মিয়া বলেন, উভয় পরিবেশেই ইনভিট্রো পদ্ধতিতে সামুদ্রিক শৈবালের উৎপাদন সম্ভব। তবে স্বাভাবিকভাবেই সামুদ্রিক পানি সামুদ্রিক শৈবালের স্থলজ চাষে অধিক উপযোগী।

তিনি মত প্রকাশ করেন যে, ১১টি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালের মধ্যে বেশিরভাগই যেমন উলভা লেক্টোকা, উলভা ইন্টেস্টাইনালিস, কলারপা রেসিমোসা, এন্টেরোমর্ফা ক্লেথ্রাটা, হিপ্নিয়া ভেলেন্টেই, গ্রেসিলারিয়া ভেরোকোসা, গ্রেসিলারিয়া কর্টিকাটার ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে সারা বছরই সামুদ্রিক শৈবাল চাষ করা যেতে পারে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে ৩টি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল যথা উলভা লেক্টোকা, উলভা ইন্টেস্টাইনালিস ও গ্রেসিলারিয়া কর্টিকাটার ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে সফল চাষ প্রযুক্তির উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে বলে এবং ওই প্রযুক্তি কৃষকদের মধ্যে হস্তান্তর করা সম্ভব।

অধ্যাপক ফারুক মিয়া জানান, কৃত্রিম পরিবেশে টিস্যু রিজেনারেশনের পাশাপাশি স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমেও উলভা লেক্টোকা এবং উলভা ইন্টেস্টাইনালিসনের স্থলজ পরিবেশে চাষ সফল হয়েছে। আরও একটি প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ‘কলারপা রেসিমোসা’র ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে চাষ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে। খুব শিগগিরই এই প্রজাতির ইনভিট্রো পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন ও স্থলজ পরিবেশে চাষ প্রযুক্তির সাফল্য আসবে। অন্যান্য প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবালও স্থলজ পরিবেশে উৎপাদন সম্ভব হবে, তবে এর জন্য আরও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর বঙ্গোপসাগরের অসংখ্য জৈব সম্পদের মধ্যে সামুদ্রিক শৈবাল (সি উইড) অন্যতম এবং জৈব প্রযুক্তিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাগরে সাধারণত সবুজ, বাদামী ও লাল রঙের শৈবাল পাওয়া যায়। এই সামুদ্রিক শৈবালের প্রচুর কাঁচামাল প্রয়োজন যা বঙ্গোপসাগরে কেবল ৪-৫ মাস চাষ করে তা পাওয়া সম্ভব নয়। তাই এ গবেষণাটি করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০২২
কেএআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।