খুলনা: বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ খ্যাতনামা প্রকাশনা সংস্থা স্প্রিঙ্গার থেকে ‘নন-উড ফরেস্ট প্রডাক্টস অব এশিয়া নলেজ, কনজারভেশন লিভলিহুড’ শিরোনামে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন সম্পাদিত একটি যৌথ গবেষণা গ্রন্থ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
এ গ্রন্থের অন্য দু’জন সম্পাদক হলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. এ জেড এম মঞ্জুর রশিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান।
প্রকাশিত বইটিতে এশিয়া মহাদেশের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ নন-উড ফরেস্ট প্রডাক্টস এর ব্যপ্তি, ব্যবহার, গুরুত্ব, সংরক্ষণের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। এই গবেষণা-গ্রন্থটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৬৮, চ্যাপ্টার রয়েছে ১১টি, যেখানে এশিয়ার অকাষ্ঠল বিভিন্ন প্রকার বনজ সম্পদের তথ্য, উৎপন্ন বিভিন্ন দ্রব্যাদি ও তার ব্যবহার, নির্ভরশীল জনগোষ্ঠী, অর্থনৈতিক গুরুত্ব, কর্মসংস্থান, প্রকৃতি সংরক্ষণে ভূমিকা, আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর তার প্রভাবসহ বিভিন্ন ঝুঁকি নিরূপণ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে।
গ্রন্থটির চ্যাপ্টার-৫ এ ‘নন-উড ফরেস্ট প্রডাক্টস অব দ্য সুন্দরবনস বাংলাদেশ: দ্য কনটেক্সট অব ম্যানেজমেন্ট, কনজারভেশন অ্যান্ড লিভলিহুড শিরোনামে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন এর গবেষণা নিবন্ধ স্থান পেয়েছে। এই চ্যাপ্টারে মূলত সুন্দরবনের অকাষ্ঠল উদ্ভিদ শ্রেণি ও তা থেকে আহরিত বনজ দ্রব্যাদি ছাড়াও এর নানা দিক আলোকপাত করা হয়েছে। সুন্দরবন থেকে আহরিত গোলপাতা, শন, লতা-গুল্ম, মধু, মম জাতীয় দ্রব্যাদির ১৯৯১-৯২ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত লেখচিত্র সহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে শুঁটকি মাছ আহরণের ২০০১-০২ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তথ্য। একইভাবে রয়েছে চিংড়ি-কাঁকড়া, শামুক জাতীয় সম্পদের আহরণের পরিসংখ্যান। তুলনামূলক আলোচনায় উঠে এসেছে এসব দ্রব্যাদির আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব এবং সময়ের সঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে উৎপাদনের প্রভাব। সুন্দরবন থেকে রাজস্ব আয়ের একটি চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। সুন্দরবনের ঔষুধিবৃক্ষ, লতা-গুল্মের গুরুত্ব স্থান পেয়েছে। কেবল বনজ দ্রব্যাদি নয়, তা আহরণে ব্যবহৃত সামগ্রী, ব্যবস্থাপনা, সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর তথ্য ও উপাত্তও তুলে ধরা হয়েছে এ গ্রন্থটিতে। প্রাসঙ্গিকভাবে সুন্দরবনের প্রাণি ও প্রজাতিভিত্তিক উদ্ভিদের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
সুন্দরবন থেকে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ আহরণের নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনের ওপর প্রাকৃতিক দুর্যোগের থাবা, লবণাক্ততা বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো নিয়েও গবেষণাধর্মী তথ্য-উপাত্ত সন্নিবেশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ আহরণে জীববৈচিত্রের ওপর ঝুঁকির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুন্দরবনের নানাদিকে আলোকপাত শেষে এ চ্যাপ্টারে গবেষক নিবন্ধের সমাপনী টেনে কিছু সুপারিশও করেছেন। একাডেমিক ক্ষেত্রে এবং গবেষক-পাঠকের জন্য গ্রন্থটি তথ্যসমৃদ্ধ ও উচ্চমানসম্পন্ন। এটি রেফারেন্স বুক হিসেবে, অধিকতর বহুমুখী গবেষণার ক্ষেত্রে গবেষক ও তথ্যানুসন্ধানীদের প্রভূত উপাকারে আসবে বলে গ্রন্থটির মুখবন্ধে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২২
এমআরএম/আরআইএস