ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

চুয়াডাঙ্গায় তিন শিক্ষিকার তুঘলকি কাণ্ড

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
চুয়াডাঙ্গায় তিন শিক্ষিকার তুঘলকি কাণ্ড বাঁ থেকে নিগার, নীনা ও নীপা

চুয়াডাঙ্গা: দুই মাসের ছুটি নিয়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাজরাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানা।  

এদিকে একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নীনা শাহরিয়ার ও ভিমরুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক নীপা শাহরিয়ার স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

সম্পর্কে তারা আপন দুই বোন। গত ১৬ আগস্ট তাদের জমা দেওয়া রেজিগনেশন লেটার (পদত্যাগ পত্র) গ্রহণ করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১ জুলাই চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর হাজরহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নিগার সুলতানা। আত্মীয়-স্বজন আমেরিকায় থাকার কারণে চার বছর ধরে তিনি নিজের খেয়াল খুশি মতো সেখানে যাওয়া-আসা করেন,  বিভিন্ন অজুহাতে বিদ্যালয়ে থাকেন অনুপস্থিত। ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১০ মার্চ পর্যন্ত তিন মাসের চিকিৎসাজনিত ছুটির একটি দরখাস্ত নিজ বিদ্যালয়ে রেখে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি। অথচ এ ধরনের ছুটির জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে মহাপরিচালকের দপ্তর থেকে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। দেশে না এসেই ২০১৯ সালের ১১ মার্চ থেকে ১০ মে পর্যন্ত আরও দুই মাসের জন্য চিকিৎসাজনিত ছুটির একটি দরখাস্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠান নিগার সুলতানা। দুই বছর নয় মাস আটদিন অননুমোদিত ছুটি কাটিয়ে ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর তিনি বিদ্যালয়ে যোগ দেন। এরপর তিন মাস সাতদিন বিদ্যালয়ে গেলেও চলতি বছরের ২৮ মার্চ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তিনি। নিগার সুলতানার বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু গত ১৫ জুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে জানান।

একই বিদ্যালয়েরর সহকারী শিক্ষক নীনা শাহরিয়ার ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে দুই বছর ছয় মাস কোনো প্রকার ছুটি ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন।  

সহকর্মী শিক্ষকদের ভাষ্য মতে, নীনা শাহরিয়ার বর্তমানে ঢাকায় তার স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছেন।  

অপরদিকে শহরের আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিমরুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই অবস্থা। সেখানে নীনার আপন বোন নীপা শাহরিয়ার নামে আরেক শিক্ষক কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন দীর্ঘদিন। চিকিৎসাজনিত কারণ দেখিয়ে ছয় মাসের ছুটি নিয়ে নয় মাস বিদ্যালয়ে আসেননি তিনি। তাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে উঠে এলে নীনা ও নীপা স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। তারা এতোদিন অবৈতনিক ছুটি কাটিয়েছেন।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা উত্তম কুমার কুণ্ডু বলেন, ওই তিন শিক্ষকের অনুপস্থিতির বিষয় উল্লেখ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সে চিঠিতে তাদের চাকরির বিধান পরিপন্থীর বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সে অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এরই মধ্যে দুই সহকারী শিক্ষক নীনা শাহরিয়ার ও নীপা শাহরিয়ার চাকরি ছেড়েছেন। ১৬ আগস্ট তাদের পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করেছি। তারা এখন আর ওই পদে বহাল নেই। ওই দু’টি পদ শূন্য ঘোষণা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া হাজরাহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিগার সুলতানার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলছে। তার কোনো হদিস মিলছে না। তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হলেই পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া জানান, শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন কাণ্ড কখনোই কাম্য নয়। ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নিতে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। সেই চিঠি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।