ঢাকা: প্রিন্সিপালকে ‘ঘুষ না দেওয়ায়’ জয়পুরহাটের একটি কলেজের পাঁচজন শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইলে ওঠানো হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই পাঁচজনের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তে একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নান্দাইল দীঘি কলেজের চারজন প্রভাষক ও একজন প্রদর্শক গত ১৪ জুন মাউশি মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, “বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা লঙ্ঘন করে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও প্রদর্শকদের নাম অন্তর্ভুক্ত না করে দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল অধ্যক্ষ অগ্রায়ন করেন। অধ্যক্ষ মহোদয় আমাদের পাঁচজনের নিকট হতে ফাইল প্রেরণ বাবদ এক লাখ টাকা করে দাবি করেন। এতে আমরা ভুক্তভোগীরা ভীষণভাবে মর্মাহত। বিষয়টি তদন্ত করে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। ”
অভিযোগের অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার পরিচালক, জয়পুরহাটের জেলা প্রশাসক, জয়পুরহাটের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, কলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।
কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক মো. জায়েদুল ইসলাম, ইসলাম শিক্ষার প্রভাষক মো. আজিবুর রহমান, অর্থনীতির প্রভাষক আবু সাদত মো. আব্দুল আউয়াল, সমাজকর্মের প্রভাষক রোজিনা আক্তার এবং প্রদর্শক মো. ফিরোজ হোসেন মন্ডল তাদের বাদ দেওয়ার অভিযোগ করেন। অভিযোগ, অধ্যক্ষ তাদের বাদ দিয়ে কলেজের অন্য ১৪ শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার রাজশাহী অঞ্চল প্রধানের কাছে পাঠিয়েছেন।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অভিযোগ, কলেজের ১৯ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেল পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। এদের মধ্যে অধ্যক্ষ পাঁচজনের নাম বাদ দিয়ে ১৪ জুন ফাইল অগ্রায়ন করেন অধ্যক্ষ মো. সামছুল আলম ফকির। যারা টাকা দেননি তাদেরকে তাদের নাম পাঠানো হয়নি।
ওই পাঁচ শিক্ষক-কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে মাউশি গত ৩ আগস্ট রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার উপপরিচালক (কলেজ) মো. মাহবুবুর রহমান শাহকে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, তিনি এখনো এ বিষয়ে মাউশি থেকে কোনো চিঠি পাননি। হয়তো আগামী সপ্তাহে পাবেন। চিঠি পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্ত করবেন।
কলেজের অধ্যক্ষ মো. সামছুল আলম ফকির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাছ থেকে টাকা দাবির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, কলেজের পরিচালনা পর্যদের লিখিত রেজুলেশনের ভিত্তিতে পাঁচজন শিক্ষক-কর্মকর্তার নাম দ্বিতীয় সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্তির ফাইলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই পাঁচজন কলেজে অনিয়মিত হওয়ার পাশাপাশি কলেজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করায় পরিচালনা পর্যদ এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
অধ্যক্ষ সামছুল আলম বলেন, আমি অধ্যক্ষ। অধ্যক্ষ হয়ে পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্ত এড়াতে পারি না। তারা বিধি বর্হিভূতভাবে কলেজে চলাফেরা, গ্রুপিং করেন। একবার তারা একজনকে অপহরণের নামে মামলাও করেছিলেন। কিন্তু তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
অধ্যক্ষ বলেন, পরিচালনা পর্যদ সাময়িকভাবে তাদের বিষয়টি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বর্তমানে নিয়মিত পরিচালনা পর্যদ না থাকায় এডহক ভিত্তিতে পরিচালনা পর্যদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। নতুন পরিচালনা পর্যদ এলে তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ