বরিশাল: সামনের বাহিরের অংশ দেখতে বেশ চাকচিক্য মনে হলেও বরিশাল শের ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবামেক) এর হলগুলোর ভেতরের অবস্থা জরাজীর্ণ। আর জরাজীর্ণ অবস্থার মধ্যে প্রতিনিয়ত ভবনগুলোর ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ায় আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
এরইমধ্যে বাধ্য হয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্র কলেজের ফরেনসিক বিভাগের আধুনিক মরচুয়ারী ভবনে উঠেছেন।
নিরাপদ হলের দাবি জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন, আজ-কাল করে বছরের পর বছর ধরে ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য নতুন হল নির্মাণে আশ্বাস দিলেও কার্যত দৃশ্যমান কোনো কিছুই হচ্ছে না। যদিও ছাত্রীদের জন্য নতুন একটি হল নির্মাণ করা হলেও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে সামনের পুরাতন বড় হলটি।
এদিকে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ায় ব্যবহার উপযোগী-অনুপযোগী সবমিলিয়ে হলগুলোতে যে জায়গা রয়েছে তাতেও জায়গার সংকুলান হচ্ছে বহু আগে থেকেই।
কলেজের হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাসের বাসিন্দা আজিম হোসেন বলেন, ২০২০ সালে আমাদের হলের তিন তলা ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। তবে জায়গা সংকুলানে সেখানে চারমাস আগ পর্যন্ত অনেকেই থেকেছেন। আর এখন এমন অবস্থা গোটা তিন তলাতে কেউ থাকতেই পারছে না, আর দোতলাতেও থাকাটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। ভবনের অনেক ভিমে বড় বড় ফাটল ধরেছে। সেসঙ্গে ছাদের পলেস্তারা খসা অংশে জং ধরা রড বেরিয়ে এসেছে।
এ হলের বাসিন্দা দিপু ও তুহিন বলেন, হলের যে কোনো কক্ষে যখন-তখন ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। গতকালও গণরুমের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে বিছানার ওপরে। ভাগ্য ভালো বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ অবস্থায় পড়াশুনা করার থেকে জীবন রক্ষা করার চিন্তাটা মাথায় বেশি ধরে রাখতে হয়, কখন যে কি হয় বলা তো যায় না।
এদিকে ক্যাম্পাসের সিনিয়র ছাত্রদের মধ্যে এহসান ও তাহসিন বলেন, বাস্তবে শুধু হাবিবুর রহমান ছাত্রাবাস নয়, জামিলুর রহমান ও মঈনুল হায়দার ছাত্রাবাসসহ মেয়েদের পুরাতন দুটি ছাত্রবাসেরও একই অবস্থা। যেসব কক্ষ ও ভবন ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে সেখানকার ছাত্রদের আবাসন দিতে গিয়ে চার জনের কক্ষে আট জন থাকছি। তারপরও কেউ আমাদের দিকে কেউ ফিরে তাকাচ্ছে না।
ছাত্রী হোস্টেলের নিবাসী লিসা বলেন, আমাদের পুরাতন বড় হলটি বহু আগেই বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়েছে। জায়গা সংকটে একসময় ছাত্রীরা মরচুয়ারী ভবনে থাকতেন। আর বর্তমান ছাত্রাবাসে জায়গা সংকটে সেখানে ছাত্ররা থাকতে শুরু করেছেন। আবার কিছুদিন পর আমাদেরও অন্য জায়গায় গিয়ে থাকতে হবে। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য নতুন হল খুবই প্রয়োজন।
শেবামেকের প্রশাসনিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের জন্য তিনটি ও ছাত্রীদের জন্য তিনটি হল রয়েছে। সেখানে ১ হাজর ৪২৮টি সিট থাকলেও, হাবিবুর রহমান ছাত্রবাসের তৃতীয় তলাসহ গোটা একটি ছাত্রীনিবাস ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় বর্তমানে পাঁচটি হলে সিটের সংখ্যা এক হাজার ২৮টি।
ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় হাবিবুর রহমান ছাত্রবাসের তৃতীয় তলা ব্যবহার অনুপযোগী ঘোষণা করায় ১৯টি রুমে ১৩৬টি সিটের বরাদ্দ কমেছে এবং এক নম্বর ছাত্রী নিবাস ভবনটিতে ৮০টি রুমে কমেছে ৩২০টি সিট। আর এ সিটের শিক্ষার্থীদের সামাল দিতে এখন কলেজ কর্তৃপক্ষকে টিভি রুম, কমন রুমসহ বিভিন্ন জায়গায় রাখতে হচ্ছে। চার জনের কক্ষে ছয় থেকে আট জনকেও সিট দিতে হচ্ছে। তবে এরপরও সিট না পাওয়া প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীকে নিজ ব্যবস্থায় বাহিরে থাকতে হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে হলগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ছে তা স্বীকার করেছেন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও মহিলা ইন্টার্ন ডক্টরস হোস্টেলের দায়িত্বে থাকা ডা. শিরিন সাবিহা তন্নী।
তিনি বলেন, ওই হোস্টেলটিও পুরাতন। সেখানে একদিন বাথরুমের ছাদের বিশাল পলেস্তারার অংশ খসে পড়েছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ড আগে বাথরুম থেকে একটি ছাত্রী বের হয়েছিল তা না হলে বড় ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হতো তিনি। আমি নিজে গিয়ে তা দেখে ও ঘটনা শুনে ভয় পেয়েছি। তাই বর্তমানে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ হল দরকার বলে মনে করেন এ চিকিৎসক।
এ বিষয়ে শেবামেকের অধ্যক্ষ ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের মেডিক্যাল কলেজের বয়স ৫৪ বছর। তাই পুরনো আবাসিক হলগুলোর বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের পুরাতন আটটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য বহুতল হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। শুনেছি এ সংক্রান্ত প্রস্তাব একনেকে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পাস হলে আশা করি দ্রুত কাজ শুরু হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এমএস/আরআইএস