ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

শিক্ষা

ভাঙনের মুখে ব্রিটিশ আমলের বিদ্যালয় 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
ভাঙনের মুখে ব্রিটিশ আমলের বিদ্যালয় 

নড়াইল: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামে প্রায় তিন একর জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৫ সালে।
 
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিশাল খেলার মাঠে সকাল-বিকেল জমত নানা খেলাধুলা।

কিন্তু মধুমতি নদীর ভাঙনে ১৯৯০ সালে খেলার মাঠসহ বিদ্যালয় ভবনটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
 
পরে বিদ্যালয়টি সরিয়ে গ্রামের আরেক অংশে স্থাপন করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টির নাম ‘মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। কালের বিবর্তনে সেটি আবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। ভাঙনের আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় ভুগছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা।
 
এছাড়া নদীতে বিলীন হচ্ছে ওই এলাকার মাকড়াইল, কাশিপুর ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের বাড়িঘর, গাছপালা ও ফসলি জমি। নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ।
 
স্থানীয় জনসাধারণ মনে করেন, বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে সর্বোচ্চ ১০০ মিটার এলাকায় বালুর বস্তা ফেলা হলে আপাতত ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হবে। এতে বেঁচে যেতে পারে বিদ্যালয়সহ ওই গ্রামটি।
 
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমবার যখন বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, তখন ওই গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ৩৩ শতাংশ জমি দান করেন। সেখানেই আবার নির্মাণ করা হয় বিদ্যালয়টি। বর্তমানে সেখানে দু’টি একতলা ভবন ও একটি টিনশেড ঘর আছে।
 
বিদ্যালয়টি ঘুরে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের পূর্বপাশের একটি ভবন ও টিনশেড ঘরটির সঙ্গে মিশে প্রবাহিত হচ্ছে পানির স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে কিছুদিন আগে সেখানে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছিল। সেটা পর্যাপ্ত না হওয়ায় ও স্রোতের তীব্রতার কারণে বেশ কিছু বালুর বস্তা তলিয়ে গেছে।
 
বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি ফজলুর রহমান মৃধা বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যালয়টির ভাঙন ঠেকাতে তাৎক্ষণিকভাবে সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার নির্দেশে বালুর বস্তা ফেলা হয়েছিল। তা না হলে এতোদিন বিদ্যালয় ভবন নদীতে চলে যেত। তবে বর্তমানে বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে উজানে ভাঙছে। সেখানে সর্বোচ্চ ১০০ মিটার এলাকায় দ্রুত বালুর বস্তা ফেলা দরকার। তাহলে ভাঙন আপাতত ঠেকানো যাবে।
 
বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল ফজল, মাহফুজুর রহমান, রফিকুল ইসলাম ও স্বর্ণালী জানালেন, ব্রিটিশ আমলের বিদ্যালয়টি এক সময় জমজমাট ছিল। নানা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে মুখর থাকত এলাকা। প্রথমবার নদী ভাঙনের পর বিদ্যালয়টি হারিয়েছে খেলার মাঠ। আস্তে আস্তে ঐতিহ্য হারাচ্ছে এ এলাকা। এখানে ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে এসব জনপদ বিলীন হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আর থাকবে না।
 
বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া খানম, তানজীব হাসান, সাব্বির হুসাইন ও লাবিবের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়, ভাঙন প্রতিরোধে ভালো ব্যবস্থা না নিলে হয়তো গাছতলায় ক্লাস করতে হবে। আমরা খুব ভয়ে আছি।
 
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) স্বপন কুমার বর্মণ বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
 
পাউবো নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বাংলানিউজকে বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে সেখানে তাৎক্ষণিক বালুর বস্তা ফেলা হয়েছে। এছাড়া ছয় মাস আগে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নড়াইল জেলার ২৩টি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এসব প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ার আগে তৃতীয় পক্ষ সম্ভাব্যতা যাচাই করতে জরিপ করে। ওই জরিপের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এসব প্রক্রিয়া শেষে মূল প্রকল্পটি অনুমোদন হলেই কাজ শুরু হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।