ইবি: ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় খালেদা জিয়া হলের ছাত্রীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এক ছাত্রীকে বহিষ্কার করেছে হল প্রশাসন।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উপস্থিতিতে হলের টিভি রুমে ছাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে এ ঘটনায় বহিষ্কার আদেশ পাওয়া ছাত্রী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সৈয়দা সায়মা রহমান ও হলের অন্যান্য ছাত্রীরা হল প্রভোস্ট বরাবর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা কর্তৃক এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টায় হলের দেড় শতাধিক ছাত্রী হলগেটে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা হেনস্তা ও মারধরকারীদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ বিচার দাবি করে স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ চলাকালে রাত ৮টায় প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য ও একজন আবাসিক শিক্ষক এবং সাড়ে ৮টায় প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা সাথী হলে আসেন। তারা ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন।
পরে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের উপস্থিতিতে দীর্ঘ আলোচনা শেষে সৈয়দা সায়মা রহমানকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে হল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ছাত্রী হেনস্থাকারী ছাত্রলীগ নেতা ও ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের শাস্তির দাবিতে দেড় শতাধিক ছাত্রীর স্বাক্ষর সংবলিত লিখিত অভিযোগ দিয়েছে খালেদা জিয়া হলের ছাত্রীরা। লিখিত অভিযোগে ঘটনার বিবরণ, শাস্তির দাবির সঙ্গে চার দফা দাবি তুলে ধরেন।
দাবিগুলো হলো- ছাত্রী হেনস্তার মূল পরিকল্পনাকারী বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী সৈয়দা সায়মা রহমানের ছাত্রত্ব বাতিল, জনসম্মুখে হেনস্থাকারী ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান হাফিজকে ভুক্তভোগী ছাত্রীর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না দেওয়া, ভুক্তভোগীসহ হলের আবাসিক অন্যান্য ছাত্রীদের নিরাপত্তা দেওয়া।
ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে খালেদা জিয়া হল প্রশাসন। কমিটিতে হলের হাউজ টিউটর মাহবুবা সিদ্দিকাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন হাউজ টিউটর মো. নাজমুল হুদা এবং নাহিদা আক্তার।
এদিকে পপি আক্তারের বিরুদ্ধেও শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ দিয়েছে প্রথম বর্ষের ছাত্রী সায়মা। অভিযোগের ভিত্তিতে হলের হাউজ টিউটর নাজমুল হুদাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে হল প্রশাসন। কমিটির সদস্যরা হলেন হলের হাউজ টিউটর মাহবুবা সিদ্দিকা ও নাহিদা আক্তার।
এ বিষয়ে প্রভোস্ট অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, আজ কোষাধ্যক্ষ ও প্রক্টর স্যারসহ আমরা ছাত্রীদের সঙ্গে বসেছি। সেখানে হলের দেড় শতাধিক ছাত্রীর স্বাক্ষরসহ সায়মার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে তার সিট বাতিলের দাবি করে ও হেনস্তার অভিযোগে অভিযুক্ত বিচারের দাবি করেছে। আমরা সায়মাকে হল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছি এবং হেনস্তার অভিযোগ থাকা ছাত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার জন্য প্রক্টরিয়াল বডির কাছে সুপারিশ করেছি। এছাড়া অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছি। অন্যদিকে সায়মা আলাদাভাবে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছে এর ভিত্তিতেও তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছি।
ভুক্তভোগী ও বিক্ষোভকারীদের সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতার রেফারেন্সে হলের গণরুমে সিটপ্রাপ্ত ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সৈয়দা সায়মা রহমান নামে এক জুনিয়র দ্বিতীয় তলার কক্ষে ওঠেন। সেখানে তাকে পছন্দমতো সিট না দেওয়ায় হলের সিনিয়র ছাত্রীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়।
এ ঘটনায় ওই জুনিয়র তাঁর পরিচিত ছাত্রলীগ নেতা মেহেদী হাসান হাফিজকে জানান। পরে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) শাখা ছাত্রলীগ নেতা হাফিজসহ কয়েকজন ওই হলের সিনিয়র পপি আক্তারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে রাস্তা আটকে হেনস্তা করেন। এসময় তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধু মো. পথিক প্রতিবাদ করলে তাকে মারধর করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২২
আরএ