ফরিদপুর: ফরিদপুরের সালথা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল শেষে র্যাগ ডে’র নামে ছাত্র-ছাত্রীদের বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বুধবার (২ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আকতার হোসেন শাহিন বাংলানিউজকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও বলেন, সালথা কলেজে মিটিং কল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৩১ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে সালথা সরকারি কলেজে হলরুমে বিদায় অনুষ্ঠান ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টার দিকে অনুষ্ঠান শেষে পরীক্ষার্থীরা কলেজ মাঠে নামে ভিন্ন পোশাকে। তারা কলেজের মনোগ্রামযুক্ত সাদা-কালো রঙের টি-শার্ট পড়ে মেতে ওঠে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে।
একপর্যায়ে রং খেলা ও একজন আরেকজনের টি-শার্টে লিখে অশ্লীল সব ভাষা। যেসব শব্দ সীমা অতিক্রম করে অশ্লীলতার। এভাবেই উৎযাপিত হয় এখানকার পরীক্ষার্থীদের শেষ দিন র্যাগ ডে। পরে এসব ছবি আবার শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ফেসবুকে পোস্ট করে। যেকারণে অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বার্তা দিয়ে মোঁড়ানো পোশাকসহ ছাত্র-ছাত্রীদের ছবি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো সমালোনার ঝড় ওঠে জনসাধারণের মধ্যে।
সালথা সরকারি কলেজের কয়েকজন পরীক্ষার্থী জানান, দীর্ঘ আড়াই বছর লেখাপড়া করেছি সালথা কলেজে। তাই এই কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়েছে আমাদের। সুখে-দুখে সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থেকেছি। বিদায় নেওয়ার সময় সবাইকে একসঙ্গে পেয়েছি। আর এই স্মৃতি যাতে সারা জীবন ধরে রাখতে পারি সেজন্যই র্যাগ ডেতে আমাদের সাদা টি-শার্টে যে যার মতো লিখে দিয়েছে।
অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ ভাষা লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানায়, সবাইতো খারাপ ভাষা লিখেনি। যারা লিখেছে এবং ফেসবুকে পোস্ট করেছে তাদের জন্য আমাদের সবার আনন্দটাই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। সালথা কলেজের মনোগ্রামযুক্ত টি-শার্টের ওপর অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ বার্তা লেখা যেমন কলেজের মানহানি হয়, তেমনি প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েও প্রশ্ন উঠে।
তবে অনেক শিক্ষার্থী সালথা কলেজের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এতদিন এই কলেজে লেখা-পড়া করেছি এখন বিদায়ের সময় কলেজ থেকে আমাদের একটা ফুল দিয়েও বিদায় দেওয়া হয়নি।
কলেজটির সাবেক শিক্ষার্থী মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে লেখাপড়া করার সময় অনেকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। শিক্ষকদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকে বিদায় অনুষ্ঠানে দোয়া মাহফিলের আয়োজন হতো। আমাদের সময় র্যাগ-র্যাগিং শব্দটিতে সবার ভয় ছিল। এখনকার ছাত্র-ছাত্রীরা বিদায় অনুষ্ঠানের দিন স্বাভাবিক ভাবেই র্যাগ ডে নামে অপসংস্কৃতি উৎযাপন করে। যার মাধ্যমে সমাজে অশ্লীলতা ছড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিনয় কুমার চাকী বলেন, সালথা কলেজ সরকারি। তাই এ বিষয় আমি কোনো মন্তব্য করবো না। এটা ইউএনও মহোদয় দেখবেন।
সালথা কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্ণচন্দ্র বর্মন বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের কলেজের নির্ধারিত বিদায় অনুষ্ঠান শেষে তারা কলেজের বাইরে গিয়ে এসব অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বার্তা লিখে ফেসবুকে ছড়িয়েছে। ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি। যেহেতু শিক্ষার্থীরা কলেজ সংশ্লিষ্টতায় অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ বার্তা লিখে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ ব্যাপারে ইউএনও’র সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
কলেজটির পরিচালনা পর্ষদ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও মো. আকতার হোসেন শাহিন বলেন, এ ব্যাপারে কলেজটিতে মিটিং কল করা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর এ ঘটনায় কলেজ সংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত কিনা, সে বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে। কলেজ সংশ্লিষ্ট কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২২
এসআরএস