রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভর্তি পরীক্ষায় ওয়ার্ড কোটার ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ নম্বর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ফলে এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ৬০ জন সন্তান এবারের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েও ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন৷
রোববার (৬ নভেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষা উপ-কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম নিশ্চিত করেন।
অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৩০ নম্বর প্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সন্তানরা ওয়ার্ড কোটায় ভর্তি হতে পারবেন। তবে শিক্ষার্থীদের অধিক পছন্দের বিষয়গুলোতে তারা ভর্তি হতে পারবে না।
এর আগে, গত ২৪ অক্টোবর উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে ভর্তি উপ-কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পোষ্য কোটায় ভর্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০ থেকে কমিয়ে ৩০ করার প্রস্তাব জানানো হয়৷ ‘সি’ ইউনিটে আবশ্যিকে ২৫ ও ঐচ্ছিকে ১০ নম্বর পাওয়ার শর্ত পূরণ করতে পারেননি এমন পোষ্য কোটার শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু বেশির ভাগ সদস্য এতে অসম্মতি জানালে প্রস্তাবটি সভায় পাস হয় না।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে কোটাসহ ৪ হাজার ৬৪১টি আসনের বিপরীতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন দেড় লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ন্যূনতম পাস নম্বর ৪০। প্রতি বছর পোষ্য কোটায় মূল আসনের ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সন্তানদের বিশেষ বিবেচনায় এই সুযোগ দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক আতাউর রহমান রাজু বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত সুদূর প্রসারী শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এটা মনে হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুসরণ করা হয়েছে। এ ধরনের নিয়ম সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বাতিল করা উচিত। এই প্রক্রিয়াটা শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকারক। এভাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অযোগ্য শিক্ষার্থী বাড়বে, প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হবে। একটা সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পারিবারিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এ বিষয়ে রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহবায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জালিয়াতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম তো ক্ষুণ্ন হয়েছে তার সঙ্গে যোগ হয়েছে ফেল করা শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো। ফেল করা শিক্ষার্থী যে বিভাগে ভর্তি হয়েছে সেই বিভাগের ওয়েটিং লিস্টে থাকা শিক্ষার্থীও তার থেকে দিগুণ নম্বর পেয়েছে। এমন অযোগ্য শিক্ষার্থী শুধু বাবা-মায়ের পরিচয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে। আবার এইসব শিক্ষার্থী পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও হচ্ছেন। বিষয়টা এমন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টা যেন তাদের পৈতৃক সম্পত্তি।
প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই ফেল করা শিক্ষার্থী ভর্তি না হোক। তবে আমি যদি নাও চাই, আর যদি ভর্তি কমিটি সিদ্ধান্ত নেয় তখন সেটা আমারও মতামত হয়ে যায়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। গতবারও আমরা বলেছিলাম এটা থাকবে না। কিন্তু কথা রাখতে না পারার জন্য আমরা দুঃখিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০২২
আরএ