যশোর: চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার প্রশ্নে ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ওঠা উসকানির অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
যশোর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কে এম রব্বানীকে তদন্ত কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে।
এ কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পাঠাবে যশোর শিক্ষা বোর্ড।
মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আহসান হাবীব এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় বিতর্কিত প্রশ্ন প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারী পাঁচ শিক্ষকই যশোর বোর্ডের। মঙ্গলবার তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র। এ ব্যাপারে বোর্ড সর্বোচ্চ কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
যশোর শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোববার (৬ নভেম্বর) এইচএসসি বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের প্রশ্নপত্রের একটি প্রশ্ন নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। ওই প্রশ্নের উদ্দীপক (সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অংশ) হিসেবে এমন বিষয়কে বেছে নেওয়া হয়েছে, যা খুবই সংবেদনশীল বিষয়। এটি নিয়ে ফেসবুকেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বলা হচ্ছে এতে সাম্প্রদায়িক উসকানি রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্রের প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারীদের (মডারেটর) চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়। মঙ্গলবার তারা প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী শিক্ষক এবং পরিশোধনকারী চার শিক্ষককে শনাক্ত করে যশোর শিক্ষা বোর্ডকে জানিয়েছে। তারা হলেন, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল এবং চার পরিশোধনকারী শিক্ষক নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর মাধব চন্দ্র রুদ্র জানিয়েছেন, ওই প্রশ্ন প্রণয়নকারী এবং চারজন মডারেটর সবাই যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক। ঢাকা বোর্ড তাদের চিহ্নিত করে যশোর বোর্ডকে জানিয়েছে।
তিনি আরও জানান, এমন প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও কিভাবে এই প্রশ্নপত্র হলো সেটি তদন্তের জন্য দ্রুত একটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পালের মোবাইলফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া গেছে। ডা. সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ বলাই চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, প্রশান্ত কুমার পাল একজন ভালো শিক্ষক। কিন্তু তারপরও তার হাত দিয়ে এমন প্রশ্ন কিভাবে হলো বুঝতে পারছেন না। কিন্তু যেটি হয়ে গেছে সেটি তো সত্য। এখন বোর্ড যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী তিনি পদক্ষেপ নেবেন।
প্রশ্নপত্রের মডারেটর নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন বলেন, তিনি ওই প্রশ্নের মডারেশনে ছিলেন। এ ধরণের প্রশ্ন থাকলে তা সংশোধন করে দেওয়া হয়; অথবা কেটে নতুন প্রশ্ন সংযোজন করা হয়। কিন্তু কিভাবে এই প্রশ্নটি রয়ে গেল তা বুঝতে পারছেন না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২২
ইউজি/এসএ