ইবি: বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় ১০ বছর ধরে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) চাকরি করছেন হিসাব বিভাগে কম্পিউটার অপারেটর নিশাত মৌমিতা।
আবার পোষ্য কোটায় কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন মৌমিতার ছেলে।
সূত্র জানিয়েছে, ২০১২ সালের ৯ সেপ্টেম্বর চাকরিতে যোগ দেন মৌমিতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আলাউদ্দিনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১৭তম সিন্ডিকেটে তার চাকরির অনুমোদন হয়। একই বছর ৩০ মে পদটির বিপরীতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী বোর্ডে ২৩৪ নম্বর প্রস্তাবে তার চাকরির সুপারিশ করা হয়।
শুধুমাত্র প্রত্যয়নপত্র দিয়েই চাকরি নিশ্চিত হয় মৌমিতার। যা নীতিমালার সম্পূর্ণ বিপরীত। জমা দেওয়া প্রত্যয়নপপত্রেও নিজ গ্রাম ও ইউনিয়নের নামের মিল নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ জানে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে তৎকালীন উপাচার্য একই সঙ্গে ১২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন। পরে নিয়োগে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে ক্যাম্পাসে শিক্ষকরা তার অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করেন। পরে ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় চাকরি পান তিনি। নীতিমালার আলোকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় প্রমাণপত্র হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইস্যু করা সাময়িক বা মূল সনদপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করার কথা। কিন্তু তিনি নিয়োগের সময় মুক্তিযোদ্ধার কোনো সনদ জমা দেননি। শুধুমাত্র একটি প্রত্যয়নপত্র জমা দেন। সেখানেও ইউনিয়নের নাম হরিনারায়ণ ও গ্রামের নাম ধল সাগর দেওয়া রয়েছে। যা আবেদনকৃত ঠিকানার সঙ্গে মিল নেই। চাকরির ১০ বছর পার হলেও এখনো সনদপত্র জমা দেননি তিনি।
এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর নিশাত মৌমিতা মুক্তিযোদ্ধার সনদ ছাড়াই চাকরি নেওয়ায় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেন অর্থ ও হিসাব বিভাগের উপ-হিসাব পরিচালক (অবসরপ্রাপ্ত) মো. আয়াত আলী।
চিঠিতে তিনি লেখেন, অভিযুক্ত নিশাত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র জমা না দিয়েই বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে চাকরি নিয়েছেন। বর্তমানে চাকরিতে বহালও রয়েছেন।
ভুয়া পরিচয়ে নেওয়া চাকরি থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়ে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে চাকরি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে তার এ লিখিত অভিযোগপত্রটি প্রথমে রেজিস্ট্রার অফিসে লিপিবদ্ধ করা হলেও পরে চিঠিটি প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার জামিরুল ইসলামের কাছে গেলে ফাইলটি ‘উইথড্রো’ করে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জামিরুল বলেন, ফাইলটি আমার টেবিলে এসেছিল। পরে রেজিস্ট্রারের পিএস (একান্ত সচিব) আনোয়ার হোসেন এসে ফাইলটি উইথড্র করে নিয়ে যান। ফলে সেটিতে আর কাজ হয়নি। কি কারণে তিনি এটি উইথড্র করে নেন, তা আমার জানা নেই।
বিষয়টি অস্বীকার করে আনোয়ার বলেন, আমি ফাইল উইথড্র করিনি। আয়াত আলী (অভিযোগকারী) নিজেই নিয়ে গেছেন।
তবে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই চিঠিটি উইথড্র করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র।
অভিযোগের বিষয়ে নিশাত মৌমিতা বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে এখনো সনদটি পাইনি। সেটা প্রক্রিয়াধীন।
প্রত্যয়নপত্রে ভুলের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি প্রিন্টিং মিসটেক হতে পারে।
কর্মকর্তা কর্তৃক লিখিত অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আয়াত আলী আমার বড় বোনের সাবেক স্বামী। সে কাবিননামার ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে আমার বোনকে কুষ্টিয়ায় একটি জমি লিখে দেন। ডিভোর্সের পর সে জমি আবার ফিরিয়ে নিতে চাপ দিতে থাকেন। জমি না পেয়ে আমার চাকরি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এইচ এম আলী হাসান বলেন, এ রকম কোনো চিঠি আমি পাইনি। পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নিতে বলব। আর নীতিমালা অনুযায়ী অবশ্যই সনদ জমা দিতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, রেজিস্ট্রার বিষয়টি দেখবেন। প্রতিকার না পেলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০২২
এসআই