ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ধার করা ভবনে পাঠদান, শঙ্কিত অভিভাবকরা 

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
ধার করা ভবনে পাঠদান, শঙ্কিত অভিভাবকরা  ক্লাসরুম।

ফেনী: ১১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মঙ্গলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফেনী জেলার প্রাচীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই প্রতিষ্ঠান অগ্রগামী।

শতর্বষ পেরোনো এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখনো ভুগছে নানা সংকটে!

নতুন প্রতিষ্ঠিত স্কুলগুলো দো,তিনতলা ভবনে পরিচালিত হলেও এই স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে পুরাতন কয়েকটি জীর্ণ কক্ষে। শ্রেণীকক্ষ সংকটের কারণে পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মঙ্গলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে পুকুর পাড়ের দুটি কক্ষ ধার করে চলছে পাঠদান। তাতেও সংকুলান না হওয়ায় ছাদের সিঁড়িঘরে পাঠদান করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বারবার কর্তৃপক্ষের কাছে ভবনের চাহিদার কথা জানানো হলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।  

শ্রেণীকক্ষ চার, শিক্ষার্থী তিন শতাধিক:


স্কুলের প্রধান শিক্ষক (চ.দা) মো. নুরুল হুদা জানান, স্কুলে শ্রেণীকক্ষ আছে সাকুল্যে ৪টি, শিক্ষার্থী আছে তিন শতাধিক। দুই শিফট করেই শিক্ষার্থীদের শ্রেণীকক্ষে ঠিকমতো জায়গা দেওয়া যায় না। স্থান সংকুলান না হওয়ার কারণে শির্ক্ষাথীদের পাঠদানেও বিঘ্ন ঘটে। যে কক্ষগুলো আছে সেগুলোও আকারে ছোট। বছর বছর সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগকে জানিয়েও এ বিষয়ে কোনো সুরাহা হয় না। পিডিপি ৩ এর যে ভবনটি আছে তা বর্ধিত করার জন্যও বারবার আবেদন করা হয়েছে। তাতেও কোনো সমাধান মিলছে না। সিঁড়িরুমেও ক্লাস করাতে হয় আমাদের।

শঙ্কিত অভিভাবকরা:

স্কুলে মূল আঙ্গিনা থেকে পৃথক পুকুর পাড়ে হাইস্কুলের পরিত্যক্ত ভবনে নির্জন স্থানে পাঠদান নিয়ে শঙ্কিত থাকে অভিভাবকরা। তারা বলছেন এভাবে স্কুলের আঙ্গিনার বাইরে ক্লাস করা তাদের মেয়েদের জন্য নিরাপদ নয়। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড গরম। কাঠের অবকাঠামো নড়বড়ে হওয়ায় ভেঙে যাওয়ার ভয়ে বৈদ্যুতিক পাখাও চালানো যায় না। অসহনীয় গরমে কষ্ট করে কচিকাচা শিক্ষার্থীরা। আবার বর্ষায়ও দেখা দেয় বিপত্তি। টিনের ফুটো দিয়ে পড়ে জল। সেই জলে ভিজে যায় ব্ল্যাকবোর্ড। নষ্ট হয় শিক্ষার্থীদের বই খাতাও।

মঙ্গলকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়টির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মীর হোসেন বলেন, শ্রেণীকক্ষের সংকটে এ স্কুলটিতে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারছে না। পুকুরের পাড়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসের দুটি ভবনে শিক্ষাথীরা ক্লাস করে। পুকুর পাড়ের এই জায়গা প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদও না। উচ্চ বিদ্যালয় এ কক্ষ দুটি আপাতত দিয়েছে। দরকার হলে নিয়েও নিতে পারে। তখন শ্রেণীকক্ষ সংকট আরও প্রকট হবে।  

এই অভিভাবক বলেন, স্কুলটির এখন যে ভবন আছে তার ওপর দোতালাও করলে সংকট অনেকটাই কমবে।  

নুরুল হুদা মিজান নামের আরেক অভিভাবক বলেন, প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আজ মরমর অবস্থা। কক্ষ সংকটে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা। ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য ৪টি শ্রেণীকক্ষ আছে, যা বর্তমান শিশু ও শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন পরিপন্থি। পাশের উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি পরিত্যক্ত ভবনে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। ধরা করা এই কক্ষগুলো মোটেই শিক্ষাবান্ধব নয়। ভেঙে পড়ার ভয়ে পাখাগুলো চালানো যায় না। প্রচণ্ড গরমে শিশুরা কষ্ট করে। ওদের দিকে তাকালে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। অভিভাবক হিসেবে কর্তৃপক্ষ যদি একটু সুনজর দিয়ে পিডিপি -৩ এর যে ভবনটি রয়েছে সেটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করে তিনটি কক্ষ বাড়য়ে দেওয়া হয় তাহলে নির্বিঘ্নে শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করতে পারবে।  

কর্তৃপক্ষের ভাষ্য:

এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওয়াহিদুর রহমানের সঙ্গে।  

তিনি জানান, বিদ্যালয়ের ভবন অনুমোদন দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আমরা চাহিদা চাইতে পারি অধিদপ্তরের কাছে। এর চাইতে বেশী কিছু করার আমাদের নেই। আমরা বেশ কয়েকবার স্কুলটির ভবনের জন্য চাহিদা দিয়েছি। গত কয়েকদিন আগেও উপজেলার ৬ টি স্কুলে জরুরি ভবনের প্রয়োজনীয়তা অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। এখানে মঙ্গলকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও রয়েছে। আমরা চাহিদা দিয়েছি দেখা যাক মন্ত্রণালয় কী পদক্ষেপ নেবে।  

স্কুলটির সভাপতি ও মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন বাহার বলেন, আমরা বারবার শিক্ষা অফিস, অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি কিন্তু কোনো সুরাহা হচ্ছে না। প্রতি বছর ভবনের জন্য চাহিদা দেওয়া হলেও ভবন অনুমোদন হয়ে আসছে না। পর্যাপ্ত ভবন না থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিদারুণ কষ্ট করে।  

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি:

শিক্ষকরা বলেন, পিডিপি ৩ এর যে ভবনটা রয়েছে। সেটি ৪ তলা ফাউন্ডেশনের। এখন সেখানে একতলা ভবন রয়েছে। সে ভবনটিতে আরেক তলা বর্ধিত করলেও শ্রেণীকক্ষ সংকট অনেকটাই মিটবে।  

অভিভাবকরা বলছেন, শঙ্কার মধ্যে তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠান, স্কুলের আর কয়েকটি কক্ষ বর্ধিত করলেও সমস্যাটির কিছুটা সমাধান মিলতো। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে আমরাও স্বস্তি পেতাম।

৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জয়িতা মণ্ডল বলে, আমাদের এই রুমে ক্লাস করতে খুবই কষ্ট হয়। স্কুলের মেইন বিল্ডিংয়ের বাইরে হওয়ায় আমরা পানি খাওয়ার জন্য টয়লেটে যাওয়ার জন্য স্কুলের ভেতর যেতে হয় যা আমাদের জন্য দূরে হয়ে যায়। এ 
ছাড়াও এখানে গরমকালে প্রচুর গরম, পাখা চালানো যায় না, ওপরের কাঠ টিন এগুলোও নড়বড়ে। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে আমাদের ভয় লাগে কখন কী হয়! বর্ষাকালে পানি পড়ে। আমরা চাই আমাদের সুন্দর একটি ক্লাসরুম হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০২২
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।