ঢাকা: আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুরই আগামী দিনের দেশ ও জাতির অগ্রনায়ক।
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায় আলোর মশাল হাতে এগিয়ে এসেছে হোপ ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়। রোববার (২৭ নভেম্বর) স্কুলটির রায়েরবাজার বালুর মাঠ শাখায় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ‘স্কুল যায় ওদের কাছে’ স্লোগান নিয়ে বিদ্যালয়টি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোট ৫টি শাখার অধীনে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। শাখাগুলো হল- মিরপুর-২, নিউ ইস্কাটন (স্বপ্নালোড়ন) শাখা, পান্থপথ (এফএনএফ), রায়েরবাজার বালুর মাঠ, কামরাঙ্গীরচর এবং শহীদনগর।
এছাড়াও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের হোপ ভ্রাম্যমান প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা দিয়ে থাকে।
হোপ-৮৭ বাংলাদেশের প্রজেক্ট ম্যানেজার কামরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ২০১৮ সাল থেকে এই স্কুল চালাচ্ছি। এখানে আমাদের শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ৫০০ জনের মত। বিপরীতে শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন ১০ থেকে ১২ জন। এ পর্যন্ত পঞ্চম শ্রেণি পাস করেছে মোট ১০০ শিক্ষার্থী। ভবিষ্যতে এই স্কুলের কার্যক্রম আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে আমাদের।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে আমাদের ঢাকা এবং চট্টগ্রামে দুটি প্রকল্প চলছে, ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন জেলায় আরও স্কুল দিতে পারব বলে আশা করছি। স্কুল চালাতে এ পর্যন্ত আমাদের কোনো সমস্যা হয়নি, আশা করছি ভবিষ্যতেও হবে না।
কামরুল ইসলামের মতে, দেশের বিত্তবান ব্যক্তিরা যদি পথ শিশুদের প্রতি এগিয়ে আসেন তাহলে এসব শিশু ভবিষ্যতে দেশের জন্য ভাল কিছু করতে পারবে।
তিনি জানান, লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে বিনোদনের জন্য শিশুদের জন্য ক্যারম বোর্ড, লুডু, প্লাস্টিকের ঘোড়া, দোলনা, পাজল গেম, ব্লক মিল করা, কালার পিরামিড মিল করাসহ নানারকম ব্যবস্থা আছে।
হোপ ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদনী বাংলানিউজকে জানায়, তার বাবা ভাঙ্গারি কুড়ায় এবং মা অন্যের বাসায় কাজ করে। মা-বাবা যা আয় করে তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই বাবা ভাই ও তাকে এই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। এখানে পড়াশোনা করতে কোনো টাকা লাগে না। এই স্কুল থেকেই তারা বই খাতাপত্র ও স্কুলের ব্যাগ পেয়েছে।
হোপ ভ্রাম্যমাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী সাকিব জানায়, তার বাবা রিকশাচালক। তিনি যা টাকা কামাই করেন তা ঘর ভাড়া এবং আমাদের খাবারের জোগাড় করতেই শেষ হয়ে যায়। তার পড়াশোনা খরচ চালাতে পারে না। তাই সে এই স্কুলে পড়ছে। এখান থেকে বইপত্র খাতা-কলাম সবকিছু পাচ্ছে।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার বলেন, আমি গত কয়েক বছর যাবত এই পদে দায়িত্ব পালন করছি। এসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিজের সন্তানের মতো করেই পড়াশোনা করাচ্ছি। বিভিন্ন খেলাধুলার মাধ্যমে তাদেরকে বিনোদন দিচ্ছি। এলাকার যেসব জায়গায় স্কুলটির ক্লাস নেওয়া হয়, সব ক্লাসই আমাদের তদারকি করতে হয়। আমি এই বাচ্চাগুলোকে নিয়ে আশাবাদী। এদের মধ্যে অনেক মেধাবি ছাত্র-ছাত্রীও আছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৭, ২০২২
এমএমজেড