সিরাজগঞ্জ: অনার্স-মাস্টার্সে ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট হওয়া মেয়ের অনুপ্রেরণায় উচ্চশিক্ষিত হতে চান ৫২ বছরের কৃষক আব্দুল মতিন মহসিন। সেই লক্ষ্য পূরণে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার কৃষক মহসিন আলী জিপিএ-৪.৬১ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের কুসুম্বি নাজাতুল্লাহ আয়েশা মেমোরিয়াল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে কম্পিউটার ট্রেডে কারিগরি বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, মহসিন নিয়মিত ছাত্র হিসেবে পরীক্ষায় অংশ নেন। স্কুলে ভর্তি হওয়ার কথা শুনেই আমরা তাকে উৎসাহিত করেছি। আজ তিনি পাস করেছেন। এতে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। এ বিদ্যালয় থেকে মোট ৩৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৩০ জন পাস করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার বারুহাস ইউনিয়নের খরখরিয়া গ্রামের মৃত জোমশের আলী ভূঁইয়ার ছেলে আবদুল মতিন মহসিন একজন কৃষক। এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। এছাড়াও তিনি সাংস্কৃতিকর্মী এবং স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। এর আগে ইউপি সদস্য প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কম থাকায় নিজেই মনে মনে আক্ষেপ করতেন।
মেয়ে অলিভা আক্তার মায়া অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্সে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট ও ডিনস অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। মেয়ের অনুপ্রেরণায়ই তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
আব্দুল মতিন মহসিন বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকায় অনেক স্থানেই নিজেকে ছোট মনে হয়। সাংসারিক অভাবের কারণে বাবা-মা পড়াশোনা করাতে পারেননি। কিন্তু আমি কৃষিকাজ করে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করেছি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে অলিভা আক্তার মায়াকে যখন ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয় সেই অনুষ্ঠানে অভিভাবক হিসেবে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে ডাকা হয়। তখনই আমি ভাবলাম শিক্ষার কী মূল্য! আমাকে যদি কেউ শিক্ষাগত যোগ্যতা জিজ্ঞেস করলে কী জবাব দেব? এসব কারণে আমার নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছিল। তখনই ভাবলাম আমি পড়াশোনা করব।
পরে বিষয়টি মেয়েকে বললাম, আমি এখন পড়াশোনা করতে চাই। নবম শ্রেণিতে ভর্তি হলাম। মেয়েও আমাকে উৎসাহ দিতে থাকলো। সেই সঙ্গে শিক্ষকরাও প্রেরণা দিলেন। এভাবেই এগিয়ে চললো আমার পড়াশোনা। এ বছর আমি সবার দোয়ায় পাস করেছি। গ্র্যাজুয়েশন করার লক্ষ্য নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাব।
মেয়ে অলিভা আক্তার মায়া বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে ডিনস অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার পরই বাবা স্কুলে ভর্তি হতে চান। প্রথমদিকে মানুষ হাসাহাসি করবে এমনটা মনে হলেও পরে বাবাকে উৎসাহিত করেছি। তিনি নিজের প্রচেষ্টায় এসএসসি পাস করেছেন।
বারুহাস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ময়নুল হোসেন জানান, কৃষক মহসিনের এসএসসি পাসের বিষয়টি এখন এলাকায় আলোচিত ঘটনা। এই বয়সে পড়ালেখা শুরু করায় সবার প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
আব্দুল মতিন মহসিনের মামাতো ভাই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিঠুন মোস্তাফিজ বলেন, মহসিন আমার ফুপাতো ভাইয়ের পাশাপাশি ভগ্নিপতিও। তিনি জীবনে সংগ্রাম করে বড় হয়েছেন। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির দ্বারা আজ এসএসসি পাস করেছেন। অল্পের জন্য তার জিপিএ-৫ হাতছাড়া হলেও বেশ ভাল ফলাফলই অর্জন করেছেন। তার জন্য আমরা সবাই গর্বিত।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
এমএমজেড/আরএইচ