মৌলভীবাজার: চোখের আলোয় পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে পায় না সে। স্বাভাবিকভাবে অন্য আট-দশটা মানুষের মতো দৃষ্টির অনুভূতি নেই তার।
২০২২ সালের সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় হরিবল বোনাজি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে পেয়েছে জিপিএ-৫। সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতাধীন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করেছে সে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরিবল বোনার্জির বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের হুগলিছড়া চা বাগানে। মা বিশখা বোনার্জি ও বাবা অনিল বোনার্জি দুজন চা বাগানের শ্রমিক। প্রাথমিক পড়ালেখা শুরু হয় তার এনজিও ব্র্যাকের স্কুল থেকে। সেখান থেকে ভালো ফলাফলে পিএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় সে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়ের পাশেই মৌলভীবাজার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ছাত্রাবাসের আবাসিক হোস্টেলে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যায় সে।
হরিবল বোনার্জি বলে, আমি যে পড়ালেখা করে এতদূর এগিয়ে আসতে পারবো সেটা কখনো ভাবতে পারিনি। আমরা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। ব্র্যাকের স্কুল থেকে আমি পিএসসি পরীক্ষা দেই। জিপিএ ৪.৮৩ অর্জন করি। এরপর পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ জন্মে যায়। ভর্তি হই মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে সমাজসেবা অফিসের সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের ছাত্রাবাসে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের পিছিয়ে পড়া চা শ্রমিকদের বিনামূল্যে টিউশনিও পড়িয়েছি। করোনাকালীন যখন স্কুল বন্ধ ছিল তখন আমার গ্রামের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে নিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে গেছি।
কথা প্রসঙ্গে সে আরও বলে, পড়ালেখার জন্য আসলে দিনে একটানা দশ ঘণ্টা পড়তে হয় না। মনযোগ দিয়ে কয়েক ঘণ্টা পড়লেই হয়।
হরিবল তার এ সফলতার জন্য সব শিক্ষক, মা-বাবা, সমাজসেবা অফিসের রিসোর্স শিক্ষক, স্কুলের শিক্ষক ও পরীক্ষা কেন্দ্রের সহযোগীকে উৎসর্গ করতে চান। ভবিষ্যৎ জীবনে সফল হওয়ার জন্য সে সবার কাছে আশীর্বাদ প্রার্থী।
মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ খ ম ফারুক আহমদ বলেন, আমদের একজন অন্ধছাত্র হরিবল বোনার্জি এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। সে গরিব চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান। অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করে এই ফলাফল অর্জন করেছে। আমরা তার সাফল্য কামনা করছি। আশা করি, সে তার জীবনে সফল হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২২
বিবিবি/আরবি