শেরপুর: ছেলেরা উচ্চশিক্ষিত। ৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করলেন তাদের বাবা।
তিনি লিখেছেন অসংখ্য ছড়া, কবিতা, উপন্যাস, গল্প ও গান। হাল না ছাড়া ব্যক্তিটি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লংগড়পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল রশিদ মণ্ডলের ছেলে আবুল কালাম আজাদ। তার এই উদ্যোগকে দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারাসহ স্থানীয় সচেতন মানুষরা।
আবুল কালাম আজাদ ১৯৭৫ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। পারিবারিক কারণে পরীক্ষা না দিয়ে চাকরি নিয়ে সৌদি আরবে যান। সেখানে থাকেন দীর্ঘদিন। বাড়ি এসে সাংসারিক কাজের ফাঁকে শুরু করেন লেখালেখি। তার দাম্পত্য জীবনে তিন ছেলে। বড় ছেলে প্রফেসর। মেজো ছেলে কামিল পাস ও ছোট ছেলে প্রকৌশলী। পুত্রবধূরাও শিক্ষিত। তিনি লিখেছেন অসংখ্য, কবিতা, ছড়া, উপন্যাস ও গান। ইতোমধ্যে দেহদাহ ও দেশরত্ন নামে দুটি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বপ্ন দেখছেন শিক্ষিত হবেন। এ কারণে ছেলেদের সহযোগিতায় শুরু করেন পড়ালেখা। এবার তিনি বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষা দেন।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেখানে যাইতাম সেখানেই অনেকে উচ্চশিক্ষার পরিচয় দিতো। তখন নিজেকে খুব ছোট মনে হতো। সেই থেকে আমার ইচ্ছা আমিও পড়ালেখা করবো। এজন্য ছেলেদের সঙ্গে পরামর্শ করে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হই। এবার আল্লার রহমতে পাস করেছি। তিনি জানান, তার এই ইচ্ছা পূরণে পরিবারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তার মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও দেশের উন্নয়ন নিয়ে লেখা কবিতার বই প্রকাশে এলাকায় প্রশংসিত হচ্ছেন।
খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, তার খবর শুনে আমরাও খুশি। কারণ এ বয়সে তিনি পড়ালেখা করে পাস করেছেন। এ জন্য তাকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মোশারফ হোসেন বলেন, আবুল কালাম আজাদ আঙুল উঁচিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার কোনো বয়স নেই। তারই এই প্রমাণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আবুল কালাম আজাদের এই প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ুক চারিদিকে। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবেন আরো অনেকে। আলোকিত হবে দেশ ও জাতি। এমনটাই মনে করেন সচেতন মানুষরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২২
এসআই