ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

নৌকা-লাঙ্গলের দাপটে ‘ঘাঁটি’তেই দিশেহারা ধানের শীষ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
নৌকা-লাঙ্গলের দাপটে ‘ঘাঁটি’তেই দিশেহারা ধানের শীষ

ফেনী: ছোট জেলা হলেও রাজনৈতিকভাবে ফেনীর গুরুত্ব সবসময়ই থেকেছে। একসময় জেলাটিকে বিএনপি নিজেদের ‘ঘাঁটি’ হিসেবে দাবি করলেও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফেনীর তিনটি আসনেই দলটির অবস্থা নাজুক। নৌকা আর লাঙ্গলের দাপটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী-সমর্থকরা। 

নির্বাচনের বাকি আর তিনদিন, প্রচারণার শেষ সময় ঘনিয়ে এলেও এখানে মাঠে তেমন দেখা মিলছে না বিএনপির প্রার্থীদের কোনো কার্যক্রম। এমনকি তাদের পোস্টার-ব্যানারও তেমন চোখে পড়ছে না।

অন্য দিকে বেশ দাপটের সঙ্গে প্রচার-প্রচারণা চলছে মহাজোটের প্রতীক নৌকা আর লাঙ্গলের প্রার্থীদের। রাস্তা-ঘাট, পথ-প্রান্তর সব জায়গায় এখন নৌকা-লাঙ্গলের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে আছে।

এ জেলার সদর আসনটিতে (ফেনী-২) লড়বেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। অপর দু’টি (ফেনী-১ ও ফেনী-৩) আসন পেয়েছে মহাজোট। তিন আসনই নিজেদের ঘরে রাখতে একাট্টা হয়ে কাজ করছেন আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের নেতা-কর্মীরা। অন্য দিকে নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে শেষ মুহূর্তে এসেও নির্বাচনী মাঠে নিজেদের সরব করতে পারছে না বিএনপি।  

ফেনী-১ (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম)
ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-১ আসন। নবম সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ৪ মেয়াদে এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপি প্রধান (কারাবন্দি) খালেদা জিয়া। খালেদার পৈতৃক এলাকা হওয়ায় তার প্রভাবে এ আসনটি ছিল বিএনপির শক্তিশালী দুর্গ। কিন্তু ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলে এ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন মহাজোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) নেত্রী শিরিন আখতার। নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন মহাজোটের শিরিন আখতার ও ধানের শীষের রফিকুল আলম মজনুপর্যবেক্ষকদের মতে, শিরিন আখতার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই এ আসনটি বিএনপির হাত ছাড়া হতে থাকে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আসনটি বাগিয়ে নিতে মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জাসদ নেত্রী শিরিন আখতার প্রচার-প্রচারণায় সরব থেকে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে দু’টি মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তার এ আসন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনুকে দেওয়া হলেও ধানের শীষের প্রচারণায় তেমন সাড়া মিলছে না। শিরিন আখতার তার জোটের নেতাকর্মীদের একাট্টা করে মাঠে নামলেও মজনুর পক্ষে ঘনিষ্ঠ কিছু বিএনপি নেতাকর্মী ছাড়া কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে মহাজোটের প্রার্থী শিরিন আখতার বলেন, খালেদা জিয়া এ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত হয়েও এলাকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারেননি। আর সে কারণেই জনগণ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তারা জনপদের উন্নয়নের জন্য নৌকা প্রতীককে বেছে নিয়েছে।
 
আর বিএনপির প্রার্থী রফিকুল আলম মজনু বলেন, নির্বাচনী প্রচারে হামলা-মামলা করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করছে সরকার ও প্রশাসন। শত বাধা থাকলেও এ আসনের মানুষ বিপুল ভোটে ধানের শীষকেই নির্বাচিত করবে।
 
ফেনী-২ (ফেনী সদর)
সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন এবং সদর পৌরসভা নিয়ে গঠিত ফেনী-২ আসন। এ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি চেযারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন (ভিপি)। এর আগেও আসনটিতে দু’বার বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ভিপি জয়নাল। এ আসনে নৌকা প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। ২০১৪ সালে বিএনপি ভোট বর্জন করলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন নিজাম হাজারী।  
নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নিজাম উদ্দিন হাজারী ও বিএনপির জয়নাল আবেদীননির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই মাঠে সক্রিয় নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি সংসদীয় আসনের ১২টি ইউনিয়ন এবং পৌরসভার ১৮টি ওয়ার্ডে নির্বাচনী জনসভা শেষ করে পাড়া-মহল্লায়ও গণসংযোগ করছেন। তার পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে গেছে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ শহরতলী এবং গ্রাম পর্যন্তও। দিনভর মুখর করছে নৌকার মাইকিং।  

অন্যদিকে নির্বাচনী মাঠে তেমন সরব নন ধানের শীষের প্রার্থী ভিপি জয়নাল। মাঝে-মধ্যে তার পক্ষে মাইকিং শোনা গেলেও দেখা মেলেনি ব্যানার, পেস্টুন আর পোস্টারের।  

জয়নাল আবেদীন দাবি করেন, তিনি যখন গণসংযোগে নেমেছেন তখন মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছেন। কিন্তু তার নেতা-কর্মীরা সরকার দলের হামলা এবং পুলিশের গ্রেফতার আতঙ্কে প্রচরণায় মাঠে নামতে পারছেন না।  

এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, বিএনপিকে প্রচারণার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। নিজেদের বিভেদের কারণেই বিএনপি প্রচারণা জমাতে পারছে না।  

ফেনী ৩ (দাগনভূঁঞা-সোনাগাজী)    
দাগনভূঁঞা-সোনাগাজী উপজেলা নিয়ে গঠিত ফেনী-২ আসন। এখানে মহাজোট থেকে নির্বাচনে লড়ছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছোট ভাই দাগনভূঞা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেন। নির্বাচনী জনসভা করছেন মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, প্রচারণা চালাতে গিয়ে আহত আকবর হোসেনপ্রচারণার শুরু থেকেই মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী উদ্দিন জাপার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে সরব। তার মতো প্রচারণায় নেই আকবর হোসেন। পোস্টারিং-মাইকিংয়েও এগিয়ে মহাজোট প্রার্থী।

মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী উদ্দিন বলেন, এ এলাকায় লাঙ্গলের পক্ষে গণজোয়ার এসেছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসবে।

আকবর হোসেনের দাবি, নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা চালাতে সুষ্ঠু পরিবেশ পাচ্ছেন না তিনি। তার নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৮
এসএইচডি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।