ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

নির্বাচন ও ইসি

প্রতীক পেয়েই সংঘাতে প্রার্থীরা

সাভার করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০২১
প্রতীক পেয়েই সংঘাতে প্রার্থীরা নৌকার সমর্থকদের হামলায় আহত স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীরা

সাভার (ঢাকা): ঢাকার ধামরাইয়ে দ্বিতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি) নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের দিনেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের নামে হামলার অভিযোগ করেছেন উপজেলার চার ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।  

গুলি ছোড়া, মারধর ও পোস্টার ছেঁড়াসহ নানা অভিযোগ তুলেছেন এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

বুধবার (২৭ অক্টোবর)  সন্ধ্যা পর্যন্ত ধামরাইয়ের রোয়াইল, সোমভাগ, বালিয়া ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নে এসব হামলার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, রোয়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টুর অফিসে হামলা চালায় ও গুলি ছুড়েছে নৌকা প্রতীকের বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খানের সমর্থকরা৷ অন্যদিকে সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেনের ওপর হামলাসহ আরও চার-পাঁচ জনকে আহত করেছে নৌকার প্রার্থী আজাহারের কর্মীরা।  

এদিকে বালিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম নান্নুর কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মুজিবুর রহমানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এছাড়া গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার কর্মীদের নামে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে।

রোয়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম সামসুদ্দিন মিন্টু জানান,বুধবার বিকেলে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে তার অফিসে হামলা চালায়। এ সময় পিস্তল দিয়ে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে আধাঘন্টা পর চলে যায় তারা।

তিনি বলেন, ওই ইউনিয়নের খড়ারচর মাঠে ১০০-১৫০টি মোটরসাইকেলে ২-৩জন আসছে। তাদের প্রত্যেকের  হাতে একটা কইরা লাঠি আর নৌকার প্রতীক লাগানো। তারা মূলত চেয়েছিল আমরা প্রতিবাদ করি। আর প্রতিবাদ করলেই বড় ধরনের সংঘর্ষ হতো। এ সময় আমরা অফিসের ভেতরেই বসা ছিলাম। আমি ওসি সাহেব ও রিটার্নিং অফিসারকে জানাইছি। ওনারা বলছেন, লিখিত অভিযোগ দিতে। আমি বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) লিখিত অভিযোগ দেব।

এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজিম উদ্দিন খান বলেন, বিষয়টা আমি জানি না। আমার বিশ্বাস নৌকার সমর্থকরা এ ধরনের কাজ করবে না।

এদিকে সোমভাগ ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওলাদ হোসেন বলেন, বানেশ্বর পশ্চিমপাড়া এলাকায় সমর্থকদের নিয়ে মাগরিব নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় নৌকার প্রার্থী আজাহার চেয়ারম্যানের সমর্থকরা সেখান দিয়ে মিছিল নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় মিছিল থেকে আমাদের উদ্দেশে স্লেজিং করতে থাকে আজাহারের লোকজন। বিষয়টি ভিডিও করে রাখতে গেলে আমার এক সমর্থকের ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আমাকে, ছোট ভাই বাবুকে, সাইফুল ও সুরুজসহ তিন-চারজনকে মারধর করা হয়। পরে তারা ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। তবে নৌকার প্রার্থী আজাহার আলী বলেন, একটা মারামারির ঘটনা ঘটছে শুনেছি। এর বেশি কিছু জানি না।

অন্যদিকে বালিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, বিকেলে একটি ভ্যানে মাইক নিয়ে আমার চার কর্মী প্রচারণা চালাতে বালিয়া ইউনিয়নের কামারপাড়ার দিকে যাচ্ছিলো। পথিমধ্যে সামনে থেকে আসা প্রায় ৪০-৫০টা মোটরসাইকেলের লোকজন তাদের ওপর হামলা চালায়। তারা সবাই নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমানের কর্মী। তারা রড ও লাঠিসোটা নিয়ে আমার চার কর্মীকেই বেধড়ক মারধর করেছে। পরে আহত শরিফুলসহ চারজনকেই মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। একজনের অবস্থা মুমূর্ষু।  আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাচন অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মুজিবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে শুনেছি পোলাপান মারামারি করছে, আমি জানি না। অভিযোগের বিষয়টি আপনার কাছেই শুনলাম।

গাংগুটিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রহমান বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমার কর্মী জাকির হোসেন গান্ধুলিয়া গ্রামে পোস্টার লাগাতে গিয়েছিল। এসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার ভাতিজা আবুল কাশেম কাশি তাকে বাধা দেয়। সে প্রতিবাদ করলে কাশি তাকে চড়-থাপ্পড় মারে। এ ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেব।  

অভিযোগের বিষয়ে ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল কাদের মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার অজুহাতে ফোন রেখে দেন তিনি।

গাঙ্গুটিয়ার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আরাফাত উদ্দিন বলেন, পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে এসে প্রাথমিক তদন্তে আশপাশের লোকজনের কাছ থেকে সত্যতা পেয়েছি। তবে অভিযুক্ত কাউকে ঘটনাস্থলে পাইনি। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসব বিষয়ে ঢাকা জেলা সিনিয়র রিটার্নিং অফিসার মনির হোসেন খান বলেন, এখনও কোনো অভিযোগ পাইনি। এসব বিষয় উপজেলা রিটার্নিং অফিসার আছে, তারাই ব্যবস্থা নেবেন। নির্বাচনের দায়িত্ব তাদের। রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা , অক্টোবর ২৮৭, ২০২১
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।