ঢাকা, শুক্রবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

চট্টগ্রাম বিদ্রোহের ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে আমার ধারণাই ছিল না: আশুতোষ গোয়ারিকার

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১০
চট্টগ্রাম বিদ্রোহের ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে আমার ধারণাই ছিল না: আশুতোষ গোয়ারিকার

‘খেলেঁ হাম জি জান সে’ ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে ৩ ডিসেম্বর। ১৯৩০-এর দশকে চট্টগ্রামে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনকে উপজীব্য করে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি নিয়ে অনেক আশাবাদী ছবিটির পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকার।

সম্প্রতি ছবিটি নিয়ে নিজের ভাবনাগুলো তিনি বিনিময় করেন বার্তা সংস্থা আইএএনএস-এর সঙ্গে। প্রতিবেদনটি অবলম্বন করে লিখেছেন রবাব রসাঁ

স্বনামধন্য পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকার আশা করেন, তার এই নতুন চলচ্চিত্র ‘খেলেঁ হাম জি জান সে’র মাধ্যমে এই উপমহাদেশের জনগণ একটি জাতির গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন। যেমনটি তিনি জানতে পেরেছিলেন।

‘এতবড় ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে আমার কোনও ধারনাই ছিল না, তাই খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এ সম্পর্কে যখন জানতে পারলাম কখনই সিদ্ধান্ত নিলাম, এটা প্রকাশ করতে হবে। আমার দর্শকদের সামনে বিষয়টিকে উপস্থাপন করতে হবে। এত বড় একটি ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করতে হবে,’ কথাগুলো বলেন অস্কার মনোনয়ন পাওয়া ‘লাগান’ এবং দর্শকনন্দিত ‘যোধা আকবর’ চলচ্চিত্রদুটির পরিচালক আশুতোষ গোয়ারিকার।

তার কাছে সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে নির্মিত তার এই তৃতীয় ছবিটি এমন একটি বিপ্লবের ঘটনা নিয়ে তৈরি যা কোনও সাধারণ বিপ্লব নয়। অথবা কোনও ব্যক্তিবিশেষের ঘটনাও নয়। বরং এই বিপ্লবে অংশ নিয়েছিলেন ৬৪ জন বিপ্লবী। তারা একজন স্কুলশিক্ষক সূর্যসেনের নেতৃত্বে ব্রিটিশদের অস্ত্রাগার লুট করেছিলেন।

যদিও চলচ্চিত্রে তুলে ধরা ঘটনাটিতে কিছু ধোঁয়াশা রয়েছে, তবু আশুতোষ আশা করেন এই চলচ্চিত্রটি ভারতের ভেতরে ও বাইরে অনেক দর্শক আকৃষ্ট করতে পারবে।

‘নিশ্চয়ই, আমি আশা করি, সব ভারতীয়র কাছে ছবিটি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। সব ভারতীয় বলতে আমি প্রবাসী ভারতীয়দেরও অন্তর্ভুক্ত করছি’। তিনি আরো বলেন, ‘শুধু তাই নয়, আমি আশা করি, এই উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের দর্শকরাও এটি উপভোগ করবেন। কেননা, চট্টগ্রাম এখন বাংলাদেশের অংশ। ’

যদিও ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে ছবি বানানোর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে আশুতোষের কাছে বিষয়টি ভিন্ন। তিনি মনে করেন, এই ছবিটির বিষয়বস্তু এতই সমৃদ্ধ যে, ঘটনাটি নিজ গুণেই অনেক উচ্চতায় অবস্থান করছে।

‘যদি লাগানের কথাই ধরেন...ছবিটির বিষয়বস্তু ছিল পুরোপুরিই আমার কল্পনাপ্রসূত। ওই ছবিটিতে আমি একটি ছোট্ট গ্রামের পরিস্থিতি তুলে ধরেছিলাম। গ্রামের অধিবাসীরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। অথবা যোধা আকবরের কথা যদি বলেন, সেখানে আমি একজন মুঘল সম্রাটের কাহিনী তুলে ধরেছিলাম। এই কাহিনীর নিজস্ব ওজন ছিল,’ আশুতোষের ভাষায়, ‘ঠিক একইভাবে ‘খেলেঁ হাম জি জান সে’ ছবিটিতে আমি প্রায় ৬৪ জন বিপ্লবীর এবং ব্রিটিশ রাজক্ষমতার পাঁচটি কেন্দ্র তুলে ধরেছি। এসব ঘটনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। ’

তিনি বিশ্বাস করেন, তার এই তৃতীয় ঐতিহাসিক ছবিটিকে একই সময়ের কোনও ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা ঠিক হবে না। ‘কারণ, আমি যখন ঘটনাটি সম্পর্কে পড়তে শুরু করি, তখন এর বিষয়বস্তু আমাকে ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে। আমি মনে করি, প্রতিটি ঘটনার নিজস্ব সময়কাল এবং গল্প রয়েছে। তাই এগুলোর প্রেক্ষাপটও ভিন্ন। ’

‘খেলেঁ হাম জি জান সে’র শিরোনাম নেওয়া হয়েছে অমিতাভ বচ্চনের ‘ম্যাঁয় আজাদ হুঁ’ ছবিটির একটি বিপ্লবী চেতনাসমৃদ্ধ গানের অংশ থেকে। কেননা, ৬৪ জন বিপ্লবীর ভেতর ৫৬ জনই ছিলেন কিশোর, তের থেকে চৌদ্দ বছর বয়সী।

আশুতোষের ভাষায়, ‘সত্যিই বিষয়টি আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করেছিল। এই বয়সেই একজন কিশোর বিপ্লব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে! এই কিশোররা যারা জীবন নিয়ে খেলেছিল, আমি তাদের জীবনবোধের একটা প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি মাত্র। ’

মানিনী চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ডু অ্যান্ড ডাই’ বইটি পড়ে আশুতোষ যেন বিপ্লবকে আবিষ্কার করেন। তাই পুরো চলচ্চিত্রটিই এই বইটির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করেছেন তিনি। এই বইটিই তার চলচ্চিত্রের একমাত্র তথ্যসূত্র।

‘আপনারা হয়তো জানেন, মানিনী হচ্ছেন কল্পনা দত্তর একমাত্র পুত্রবধূ। আর কল্পনা ছিলেন সূর্যসেনের নেতৃত্বে যে বিপ্লব হয়েছিল সেই বিপ্লবের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবী। তাই আমরা মানিনীর মাধ্যমে কল্পনা দত্তর কাছ থেকে বিপ্লব সম্পর্কে একধরনের সরাসরি তথ্যই পেয়েছি। ’

‘খেলেঁ হাম জি জান সে’ ছবিটি একাধারে বাণিজ্যিক এবং শিল্পসমৃদ্ধ। দুটি ধারাই যেন পাশাপাশি বয়ে গেছে। আশুতোষ এই ছবিটির মাধ্যমে অনেক দর্শক আকৃষ্ট করতে চান। তিনি চান সব রুচির দর্শকের কাছে এই বিপ্লবের বাণী পৌঁছে যাক।

তবে তার আগের ছবি দুটির মতো এ আর রহমান এই ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেননি। কেননা, অস্কার পাওয়ার পর থেকেই এই খ্যাতিমান সঙ্গীত পরিচালক আন্তর্জাতিক পরিম-লে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এই নিয়ে আশুতোষের কোনও খেদ নেই। তিনি বলেন, ‘সব সময়ই তিনি ভারতীয় ছবি নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন এমনটি আশা করা ঠিক হবে না। এখন তার পরিধি বেড়েছে। ব্যস্ততাও বেড়েছে। ’

আশুতোষ এই ছবির দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে নির্বাচিত করেছেন অভিষেক বচ্চন এবং দীপিকা পাড়–কোনকে। যদিও এই ছবিটিতে তারকাদের সৌন্দর্য বা খ্যাতির কোনও প্রয়োজনই নেই, ‘তবে আমি যখন বইটি পড়ছিলাম তখন অভিষেকের চেহারাই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিল। অভিষেকের সঙ্গেই যেন সূর্যসেনের চরিত্রটি বেশ মানিয়ে যায়। ’

দীপিকা সম্পর্কে বলেন, ‘হ্যাঁ, এই বিষয়ে আমার একটু আবেগ কাজ করেছে সত্যি। তবে কল্পনা দত্তর সঙ্গে দীপিকার চেহারার একটা মিল আছে কিন্তু। ’

বাংলাদেশের চট্টগ্রামের প্রেক্ষাপটে চলচ্চিত্রটি নির্মিত হলেও আশুতোষ এখানে শুটিং করেননি। কারণ, ১৯৩০ সালের পরিবেশ তুলে ধরার মতো ভূ-দৃশ্য চট্টগ্রামে এখন আর নেই।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৬১৭, ডিসেম্বর ১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।