ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিনোদন

পাওলি দামের সঙ্গে কিছুক্ষণ

এই ক’টা দিন শাকিব খানকে ভালোই লেগেছে

কামরুজ্জামান মিলু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪
এই ক’টা দিন শাকিব খানকে ভালোই লেগেছে পাওলি দাম / ছবি:নূর / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

২৫ ডিসেম্বর। ১৪/কে দিলু রোড।

ঘড়িতে তখন বিকেল সাড়ে চারটা। পরিচালক হাসিবুর রেজা কল্লোলের ‍বাসার ছাদে বসেছিলেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী পাওলি দাম। ‘মনের মানুষ’ ছবির পর আবার ঢাকায় কাজ করলেন তিনি। এবারের ছবির নাম ‘সত্তা’। এটা পরিচালনা করছেন কল্লোল। নভেম্বরে প্রথম ধাপ শেষ করেছিলেন, ২৪ ডিসেম্বর ছবিটির দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ করেছেন পাওলি। একটু পরেই তার ফ্লাইট। এয়ার ইন্ডিয়া অপেক্ষা করছে তার জন্য। এরই ফাঁকে তিনি সময় দিলেন বাংলানিউজকে।

হঠাৎ দেখার পর কারও মনেই হবে না এই পাওলি ভারতের বাংলা ছবির গন্ডি পেরিয়ে বলিউডে আলোড়ন তুলেছেন ‘হেট স্টোরি’র মাধ্যমে। কথাবার্তা শুনেও মনে হবে পাশের বাড়ির কোনো মেয়ে বুঝি! কোনো দাম্ভিকতা বা অহংকারবোধের ছিঁটেফোটা দেখা গেলো না তার মধ্যে।

‘কালবেলা’, ‘মনের মানুষ’, ‘হেট স্টোরি’ ছবিগুলো পাওলির দাম বাড়িয়েছে অভিনেত্রী হিসেবে। কয়েকটি ছবির জন্য সমালোচিত হলেও পাওলি বুঝিয়ে দিয়েছেন, চরিত্রের প্রয়োজনে মানসিকতা কিংবা প্রকাশভঙ্গি বদলে যায়। তিনি মনে করেন, যে কোনো শিল্পীরই দুটি সত্তা। পাওলির পেশাদারি সত্তায় তিনি শতভাগ সৎ। এমন একজন ঢাকায় এলে সাড়া পড়ে যাওয়ারই কথা। গত মাসের মতো এবার হয়েছেও তা-ই। তার কথা শুনতে সময় চাইতেই বাংলানিউজকে সানন্দে গ্রহণ করলেন ৩৪ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী।

বাংলানিউজ : বেশ কিছুদিন ‘সত্তা’ ছবির কাজ করেছেন। শুটিংয়ের কোন ঘটনাটি বিশেষ মনে হয়েছে?
পাওলি দাম : (কয়েক মুহূর্ত হেসে) ‘সত্তা’ ছবির শুটিংয়ের শুরু থেকে অনেক ঘটনাই ঘটেছে। কোনটা ছেড়ে কোনাটা বলবো। ইটস অ্যা বিউটিফুল জার্নি ফর মি। আমার কাজ হয়েছে দুটি ধাপে। এফডিসি, গুলশানের কাজ করেছি প্রথম ধাপে। এবার কাজ করেছি পূবাইলে। সব মিলিয়ে ভালো হয়েছে কাজটা। যে কোনো কাজেই পরিশ্রম থাকে। আমাদের অভিনয়শিল্পীদের বেলায়ও একই। তবে আমার কাছে অভিনয়ের জন্য শ্রমটা সুখের ব্যথার মতো।

বাংলানিউজ : তারপরও আলাদাভাবে নিশ্চয়ই কোনো ঘটনা আপনার কাছে আলাদা মনে হয়েছে...
পাওলি : পূবাইলের রেলস্টেশনের একটি ঘটনা বলি। সাধারণত দেখেছি, কোনো দৃশ্যধারণের জন্য ট্রেনের একটি বা দুটি বগি ভাড়া করা হয়। দুই ঘন্টা আগে থেকে স্টেশনে গিয়ে ইউনিটের লোক সব ঠিকঠাক করে। তবে ‘সত্তা’র বেলায় দেখলাম ভিন্ন ঘটনা। চিত্রনাট্যের বাইরে একটি দৃশ্যধারণের জন্য নিয়মিত ক্যামেরার বাইরে আরেকটি ফাইভডি ক্যামেরা নেওয়া হয়েছিলো। এটাকে পরীক্ষামূলক দৃশ্যও বলা যেতে পারে। দৃশ্যটি ছিলো, পূবাইলে এসে ট্রেন থামবে। আমি গিয়ে উঠবো। ট্রেনটি স্টেশনে এসে সাত-আট মিনিটের মতো দাঁড়ায়। এর মধ্যে অনেক দৃশ্য শেষ করতে হতো।

বাংলানিউজ :  তারপর?
পাওলি : আমাদের ইউনিটের মধ্যে শুধু পরিচালক, আমি আর চিত্রগ্রাহক জানতাম বিষয়টি। আর কেউ না। ট্রেনে ওঠলাম। ওঠার পর ফাইভডি ক্যামেরা আমাকে অনুসরণ করছে। হাতে সময় আছে দেখে আরেকবার শটটা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি আমার হেয়ার ড্রেসার(শ্যামলী দাস) চিৎকার করে বলছে, ‘নামেন। এখনও কি করছেন ট্রেনে? সবাই ট্রেন থেকে নেমে গেছে। ট্রেন ছেড়ে দেবে তো!’ অন্যদিকে ইউনিটের সবাই তাকে ঠেকানোর চেষ্টা করছে। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করছেন, আমাকে ধরবেন। মনে করছেন, আমি ওই ট্রেনে ভুল করে চলে যাচ্ছি! পরে পেছন ফিরে তাকে বললাম, ‘এখন যাও। শটটা শেষ করে নামছি। ’ এরপর তো সবাই হো হো করে হাসলো। এমন আরও অনেক ঘটনা আছে। পরিচালকের কাছে শুনেছি, পূবাইলে আমরা যে বনে-জঙ্গলে কাজ করেছি সেখানে হয়তো আগে ক্যামেরা এখনও ঢোকেনি।

বাংলানিউজ : শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
পাওলি : এ ছবির এখনও চারটি গানের কাজ বাকি আছে। শাকিবের সঙ্গেও অনেক দৃশ্য বাকি। শাকিবের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাটা ভালোই। সত্যি বলতে এখানে নতুন একটা ইউনিটের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে আমাকে। সংলাপ লেখক ফেরদৌস হাসান রানা এবং কল্লোলকেই শুধু চিনতাম। তবে শাকিবের নাম আগেই শুনেছি। এ দেশে তিনি নাম্বার ওয়ান হিরো। তার সঙ্গে যে ক’দিন কাজ করেছি বেশ ভালো লেগেছে। শাকিব অনেক ‍মিশুক ও সহায়তাপ্রবণ।

বাংলানিউজ : এখানকার আর কোনো ছবিতে কাজ করার প্রস্তাব পেয়েছেন?
পাওলি :  ‘মনের মানুষ’ করার পর যুতসই পান্ডুলিপি খুঁজছিলাম। অনেক প্রস্তাব পেলেও সেগুলো করা হয়নি। কারণ আমি পরিচালক, গল্প, চিত্রনাট্য, চরিত্রসহ ভালো একটা টিম খুঁজেছি। ‘সত্তা’ ছবির টিমটা আমার ভালো লেগেছে। আর এখন তো একজন আমার ভাই (পরিচালক কল্লোল) আর একজন দোস্ত (চিত্রগ্রাহক টিডব্লিউ সৈনিক) হয়ে গেছে। হি হি হি...

বাংলানিউজ :  আপনার কাছে এক একটা ছবি এক একটি ভ্রমণ। এবার কলকাতায় ফিরে যাওয়ার আগে এখান থেকে কী কী নিয়ে যাচ্ছেন?
পাওলি :  সত্যি বলতে পুরো বাংলাদেশই তো নিয়ে যাচ্ছি! পরিচালক কল্লোল গতবার আমাকে চাঁদপুর থেকে ইলিশ মাছ আর যশোরের গুড় পাঠিয়েছিলেন। প্রচুর শাড়িও কিনে দিয়েছেন তিনি। আমি নিজেও অনেক কিছু কিনেছি।

বাংলানিউজ :  এবার অভিনয় থেকে একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। ‘কালবেলা’ ছবিতে আপনি গান গেয়েছেন। এখন তো অনেক অভিনয়শিল্পীরা হরহামেশা গান গাইছেন। আপনার কি গাইতে ইচ্ছে হয়?
পাওলি :  আমার মা (পাপিয়া দাম) গান করেন। আর আমি অনেক আলসে ছিলাম, ‍এখনও আলসেমি যায়নি আমার। ছো্টবেলায় মায়ের কোলে মাথা রেখে তার গান শুনতাম। সেই থেকেই একটু-আধটু গান করা। রবীন্দ্রসংগীত আমার ভীষণ প্রিয়। একটা-দুটো জায়গায় গান করেছি। ‘কালবেলা’র পর প্রিয়া চক্রবর্তীর ‘নাটকের মতো’ ছবিতে গান করেছি। পুরো গান হয়তো গাওয়া হয়নি। তবে আমি গাইতে ভালোবাসি। গান শুনতে ভীষণ পছন্দ করি।

বাংলানিউজ : ২০০৩ সালে ছোট পর্দা দিয়ে আপনার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিলো। পাঁচ বছর টিভিতে কাজ করেছেন। এর মধ্যে যীশু দাশগুপ্তের সিরিয়াল ‘তিথির অতিথি’তে অভিনয় করে পান সুপরিচিতি। এরপর রূপালি পর্দায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। টিভিতে আবার কাজ করার ইচ্ছে আছে?
পাওলি : টেলিভিশন একটি ভিন্ন কমিটমেন্টের জায়গা। আমার পরবর্তী যেসব ছবি মুক্তির অপেক্ষায় আছে এবং যেসব ছবির লাইনআপ হাতে আছে সেগুলো রেখে অন্যদিকে ভাবার সময় সত্যি বলতে নেই।

বাংলানিউজ :  সামনে কী কী নতুন ছবি আসবে?
পাওলি :  ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাচ্ছে ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’। এটি পরিচালনা করছেন মৈনাক ভৌমিক। এর বাইরে সুভাষ শেঘলের হিন্দি ছবি ‘ইয়ারা সিলি সিলি’, দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের ‘নাটকের মতো’, সৌরভ চক্রবর্তীর ‘অরণি তখন’, ‘প্রাইম টাইম’, ‘তবুও অপরিচিত’ ছবিগুলো আছে মুক্তির অপেক্ষায়। মৈনাক ভৌমিকের ‘সার্কাস’ এবং জয়শ্রী পরিচালিত ‘টেক কেয়ার’ ছবির কাজ শুরু হবে শিগগিরই। আর ‘সত্তা’ তো থাকছেই।

সাক্ষাৎকারের আনুষ্ঠানিকতায় ইতি টানা হলো। আড্ডার ফাঁকে পাওলি জানালেন, তার নামের গল্প। বাবা অমল দাম মেয়ের নাম রেখেছিলেন পাওলি। তিনি ছিলেন পর্বতারোহী। একসময় পাহাড়ে ওঠার দারুণ নেশা ছিলো। হিমালয়ে ‘পাওলি’ নামে একটি চূড়া আছে। সেখান থেকেই মেয়ের জন্য নামটি বেছে নেন তিনি। অমল দামের পিতৃভিটা ছিলো বাংলাদেশের ফরিদপুরে। শুধু কাজের টানেই নয়, বাংলাদেশে পাওলি আসেন নাড়ির টানেই।  

বাংলাদেশ সময় : ১০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।