বলিউড অভিনেতা সালমান খানের সাজা ঘোষণার পর থেকে তার অনুরাগী ও সহকর্মীদের চোখে-মুখে ও বয়ানে উদ্বেগের চিত্র স্পষ্ট। গাড়ি চাপা দিয়ে পথচারীকে হত্যার দায়ে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার পর নানা ঘটনার জন্ম হচ্ছে।
সালমান-চুটকি
সালমান খানের সাজা হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তাকে নিয়ে চুটকি পোস্ট করেছেন অনেকে। এর একটি তৈরি হয়েছে তার অভিনীত ছবির জনপ্রিয় সংলাপ নিয়ে। আরেকটি চুটকি বানাতে টেনে আনা হয়েছে বলিউডের আরেক কারারুদ্ধ অভিনেতা সঞ্জয় দত্তকে।
সালমানের ‘বডিগার্ড’ ছবির সংলাপ ‘মুঝপে কোই এহসান না কার না…’ অবলম্বনে সঞ্জয় দত্তের বয়ানে টুইটারে চুটকি দেওয়া হয়েছে, ‘ভাইনে বোলা হ্যায় কে, মুঝপে এক এহসান কার না কে, মুঝপে কোই এহসান মাত কার না। জাজ নে সিরিয়াস লে লিয়া ইসকো (ভাই বলেছিলো, আমার একটা উপকার করবে, যে আমাকে কোনো উপকার করবে না। বিচারক এটাকেই সত্যি বলে ধরে নিয়েছেন)। ’
সঞ্জয় ও সালমান ২০০০ সালে ‘চল মেরে ভাই’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। ওই ছবির গানের লাইন ব্যবহার করেও বানানো হয়েছে চুটকি। এটি ওয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও ফোনে ফোনে ছড়িয়ে পড়েছে। এক গ্রাহক রসিকতার সুরে টুইট করেছেন, ‘সালমানের স্টক খুবই সীমিত, কিনতে হলে এখনই কিনে নিন!’
সাজা নয়, ক্ষতিপূরণ নিয়ে চিন্তা
২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ভোররাতে বান্দ্রার হিল রোডে আমেরিকান এক্সপ্রেস বেকারির সামনে সালমান খানের টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার গাড়ির চাপায় মৃত্যু হয় এক পথচারীর। আহত হন ফুটপাতে ঘুমিয়ে থাকা আরও চারজন। ওই দুর্ঘটনায় আহতরা সালমানের সাজার চেয়ে বেশি চিন্তিত ক্ষতিপূরণ নিয়ে। ১৩ বছর আগের ওই দুর্ঘটনায় আবদুল্লা রউফ শেখ একটি পা হারিয়েছেন। সেই থেকে কোনোরকমে টুকটাক কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। ফলে সালমানের সাজা নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই তার। তার পরিষ্কার কথা, ‘সাজা নয়, ক্ষতিপূরণ নিয়েই চিন্তা করছি। এই ১৩ বছরে কেউ একনজরও দেখা করতে আসেননি। কীভাবে সংসার চালাচ্ছি, তা জানার প্রয়োজর বোধ করেননি। তাহলে আমি কেন শুধু শুধু সালমানের কি সাজা হলো তা নিয়ে মাথা ঘামাবো! ওর সাজা হলে কি আমার পা ফিরে আসবে? বরং ওই দুর্ঘটনায় আমার শারীরিক যা ক্ষতিপূরণ হয়েছে এবং তার জন্য যে যে আত্মত্যাগ করতে হয়েছে আমাকে, সেই ক্ষতিপূরণ পেলে অনেক খুশি হবো। ’
একই কথা শোনা গেছে ওই ঘটনায় মৃত নুরুল্লা মেহবুব শরিফের স্ত্রীর মুখেও। তিনি বললেন, ‘ওই সময় ১০ লাখ রুপি ক্ষতিপুরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু এই মুদ্রাস্ফীতির বাজারে ওই ক’টা টাকায় কি হবে? বরং আমার ছেলেটার একটা কাজের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো। ’
দ্বিধাবিভক্ত টুইটার
সালমান খানের ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ এবং ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ ছবির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তার হাতে রয়েছে ‘সুলতান’, ‘দাবাং’ সিরিজের তৃতীয় কিস্তি, ‘নো এন্ট্রি মে এন্ট্রি’, ‘শুদ্ধি’র মতো বড় বড় ছবি। এ অবস্থায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় অনেকটাই অনিশ্চয়তার মধ্যে চলে গেলো বলিউড। কিন্তু তার দোষী সাব্যস্ত হওয়া নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত টুইটার ব্যবহারকারীরা। কেউ বলছেন ঠিক হয়েছে, আবার কেউ বলছেন তার মতো ভালো মানুষের সঙ্গে এটা না হলেই হয়তো ভালো হতো। তার সাজার পক্ষে একজন মত প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘সালমানের বড় ভক্ত আমি। কিন্তু দোষ করলে সাজা হবে, এতে তো কোনো অন্যায় নেই। ’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘ভুল করলে সাজা হবেই। সে যে-ই হোক না কেনো। এই রায়ে আমার মতো অনেকেরই বিচার ব্যবস্থায় আস্থা ফিরে এলো। ’ কিন্তু ছেড়ে কথা বলছেন না সালমান পক্ষের লোকেরা। সঠিক যুক্তি না দিতে পারলেও আবেগের বশে একজন লিখেছেন, ‘তোমার মতো ভালো মানুষের সঙ্গে কেনো এসব হয়! একদম চিন্তা করবে না। আমরা তোমার পাশে আছি। ’ অন্যজন লিখেছেন, ‘ওই মৃত বা আহতদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েই বলছি, সালমানের সাজায় মনটা ভালো নেই। ’
দুই কোম্পানির শেয়ারে ধস
সালমান খানকে নিম্ন আদালত কারাদণ্ড দেওয়ার ধাক্কা লাগলো শেয়ারবাজারেও। গত ৬ মে আদালতের রায় ঘোষণার পরই ইরোস ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়া ও মানধানা ইন্ডাস্ট্রির লিমিটেডের শেয়ারে ধস নামে। এদিন ইরোস ইন্টারন্যাশনাল মিডিয়ার শেয়ার ৫.৬৬ শতাংশ নিচে নেমে যায়। আর মানধানা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারের পতন হয় ৪.৭৪ শতাংশ।
মানধানা ইন্ডাস্ট্রিজ সালমানের বিইং হিউম্যান ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একযোগে কাজ করে। এ দুই সংস্থার মধ্যে বিশেষ চুক্তিও আছে। অন্যদিকে গত ডিসেম্বরে ইরোস ইন্টারন্যাশরাল মিডিয়া সালমানের ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ ও ‘হিরো’ ছবিতে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়। গাড়ি চাপা মামলায় বলিউডের এই সুপারস্টারের পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় এই দুই সংস্থার ক্ষতির আশঙ্কা থেকেই শেয়ার বাজারে ধস বলে মনে করা হচ্ছে।
উচ্চআদালতের প্রশ্ন
নিম্ন আদালতে সালমানের সাজা ঘোষণা হলেই মুম্বাই উচ্চ আদালতে আবেদনের জণ্য অপেক্ষায় ছিলেন তার আইনজীবী হরিষ সালভে। কিন্তু তিনি হাতে পেলেন শুধু দু’পাতার ‘অপারেটিভ পার্ট’। তাতে সাজা ঘোষণার অংশই নেই। তারই ভিত্তিতে তড়িঘড়ি আবেদন করলেন সালমান। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাই কিঞ্চিৎ সময়ও নষ্ট করতে চাননি তিনি। হরিষের আবেদন ছিলো একটাই, রায়ের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত যেন সালমানকে আর্থার রোড জেলে না পাঠানো হয়।
গোটা ঘটনাটাই ঘটে যায় তিন ঘণ্টার মধ্যে। সরকারি আইনজীবী সন্দীপ সিন্ধে অবশ্য উচ্চ আদালতকে সাজা ঘোষণার কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সালমানের আবেদনে সাড়া না দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন। তার বক্তব্য ছিলো, ‘আইন অনুযায়ী আবেদনকারীকে রাযের কপি জমা দিতে হবে। যা তিনি করেননি। ’ যদিও সেই ব্যক্তিকে গুরুত্ব না দিয়ে আবেদনকারীর অধিকার রক্ষার স্বার্থেই এদিন অন্তর্বর্তী জামিনের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। তার বক্তব্য, ‘পুরো শুনানিকালে আবেদনকারী জামিনে মুক্ত ছিলেন। তাকে আজই হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ হয়েছে। যেহেতু সালমান খানের হাতে এখনও কপি পৌঁছায়নি, তাই স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে রায়ের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তাকে ছাড় দেওয়াই উচিত কাজ হবে। ’
নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি থিপসে বলেন, ‘কপি তৈরি থাকলে তাহলেই রায় ঘোষণা হতে পারে। আজ কেনো রায় ঘোষণা করা হলো? কপি প্রস্তুত না থাকলে রায় ঘোষণা করা অনুচিত। ’ তবে জামিন মঞ্জুরের পাশাপাশি নিম্ন আদালতে আজ বৃহস্পতিবার নতুনভাবে সালমানকে মুচলেকা (ফ্রেশ বন্ড) জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ৮ মে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময় : ১৭০০ ঘণ্টা, মে ৭, ২০১৫
বিএসকে/জেএইচ
** অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলেন সালমান
** সালমান খানের ৫ বছর জেল
** হত্যা মামলায় সালমান খান দোষী সাব্যস্ত
** মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ায় বিপাকে সালমানের ড্রাইভার
** আদালতে হাজির সালমান
** আদালতের উদ্দেশ্যে বেরোলেন সালমান
** সালমানের বাড়িতে শাহরুখ